Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন বিভাগের জমিতে অবৈধভাবে ঘের নির্মাণ, প্রশাসন নিরব

লোকাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২১ ০৮:০৫

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): সরকারি অনুমতি ছাড়াই বন বিভাগের প্রায় শত শত একর জমিতে মাছের ঘের নির্মাণ করছেন পটুয়াখালীর মহিপুর থানার স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা অবৈধভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে এই ঘের নির্মাণ করছেন। মহিপুরের ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি চরে এই ঘের নির্মাণের কাজ চলছে।

স্থানীয় গঙ্গামতি চরের ৮নং ওয়ার্ডের এফরাজ শরিফের ছেলে মান্নান শরিফের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। তিনি বন বিভাগের জমি দখল করে মাছ চাষের জন্য ঘের নির্মাণ করেন এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ভরাট করেছেন বসতবাড়ি। ফলে কেওড়া, ছইলাসহ কয়েক প্রজাতির গাছ মারা গেছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানায়, বাঁধ দিয়ে ঘের নির্মাণের কারণে পানি আটকে থাকবে, যার ফলে যেকোনো সময় বাকি গাছগুলোও মরে গিয়ে সম্পূর্ন বন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। চর গঙ্গামতি বন শুধু বনই নয়, উপকূলবাসীর প্রাণরক্ষাকারী। সিডর আম্পান, আইলা, বুলবুল, নার্গিস, সর্বশেষ ইয়াসের মতো ঘুর্ণিঝড় থেকে বেড়িবাঁধের কাছে থাকা মানুষসহ উপকূলবাসীদের রক্ষা করে এই বন।

তারা আরও জানান, বঙ্গপোসাগরের ডেউয়ের আঘাতে ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ বন ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর দস্যুরা গাছ কেটে বন উজার করছে। আর প্রভাবশালীরা বড় বড় ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করছেন। এভাবে গাছ নিধন অব্যাহত থাকলে একদিন মানব রক্ষাকারী বনটি বিলীন হয়ে যাবে বলে মনে সচেতন মহলের আশঙ্কা।

মঙ্গলবার (১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০টি কেওড়া গাছসহ বেড়িবাঁধ দিয়ে এক একর জায়গায় জুড়ে ঘের নির্মাণ করেছেন হেলাল শরিফ। এই ঘের থেকেই ড্রেজিং করে বালু নিচ্ছেন তার বাসায়। নিজ ভাই হান্নান শরিফের ড্রেজার মেশিন থাকায় রাতের আঁধারে বালু তুলছেন নিজের বাড়িতে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, সাংবাদিকরা সেখানে গেলে তাদেরকে টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর টাকা নিতে রাজি না হলে রাতের আঁধারে ড্রেজিংয়ের পাইপ খুলে পাশেই রাখা হয়। ড্রেজিং করা গর্ত যেন দেখা না যায়, সেজন্য জোয়ারের পানি উঠিয়েছেন তিনি। শুধু হেলাল শরিফ নয় এমন অবৈধভাবে ঘের করার অভিযোগ আশপাশের জায়গাগুলোতে। এমনকি বন বিভাগের অফিসের কাছেই বন-জঙ্গল সাফ করে কৃষিসহ বসতবাড়ি গড়ে উঠছে। এসব কৃষকরা চাষাবাদ করতে গেলে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর তা না দিলে গাছ কাটার মামলা দেওয়ার হুমকি দেন তারা।

চোখের সামনে অনিয়ম হলেও নিরব বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বন বিভাগের স্থানীয় বিট অফিসার মোশাররফ হোসেন। মুঠোফোনে এই অনিয়মের কথা জানালে তিনি বলেন, আমি অল্প কিছুদিন আগে এখানে যোগ দিয়েছে। তাই ভাল করে সবকিছু জানিনা।

মান্নান শরিফের অবৈধভাবে বন বিভাগের জমি দখল করে মাছের ঘের নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মান্নান শরিফের কথা বলছেন মঙ্গলবার সকালে গিয়ে আমি পাইপ উঠিয়ে দিয়েছি।’ মান্নান শরিফ এভাবে ঘের নির্মাণ করতে পাড়েন কি না— এমন প্রশ্ন করলে ফোনটি কেটে দেন তিনি। অভিযোগ আছে এই কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বন উজাড় করেই বসতবাড়ি ও ঘের নির্মাণ করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মহিপুর রেইঞ্জের বন কর্মকর্তা আবুল কালামের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী— পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী— সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

এই আইন অমান্য করলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কিন্তু বলা বাহুল্য, এসব আইনের যেন কোনো প্রয়োগ নেই এখানে।

সারাবাংলা/এনএস

অবৈধভাবে ঘের নির্মাণ টপ নিউজ পটুয়াখালী বন বিভাগের জমি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর