মেহেদী হাসান বাবু একাই পাচার করেছেন ১ হাজার নারী
২ জুন ২০২১ ১৫:৪৯
ঢাকা: ভারতের বেঙ্গালুরুতে তিন মাসের নির্মম নির্যাতন ও বন্দীদশা থেকে পালিয়ে আসা এক কিশোরীর মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত তিনজনের মধ্যে মেহেদী হাসান বাবু (৩৫) নামে এক আসামি একাই ১ হাজার নারীকে পাচার করেছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের এসব চাঞ্চল্যকার তথ্য জানিয়েছেন।
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, গ্রেফতার হওয়া মেহেদী হাসান বাবু (৩৫) মামলার ভিকটিমসহ এক হাজারের বেশি নারী পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। তিনি প্রায় ৭/৮ বছর ধরে মানব পাচারে জড়িত। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ও ডায়েরিতে হৃদয় বাবু, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডায়েরিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভিকটিম জেসমিন মীমের নাম্বার ও ভারতে পাচারকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিকটিমের নাম ও মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের ডিটেইলস তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে ভারতের বেঙ্গালুরুতে তিন মাসের নির্মম নির্যাতন ও বন্দীদশা থেকে পালিয়ে আসা এক কিশোরীর মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, মামলার বাদীসহ তিনজন তরুণী বেঙ্গালুরু থেকে পালিয়ে এসেছে। তারা শুনিয়েছেন পাচারের শুরু থেকে পালিয়ে আসা পর্যন্ত লোমহর্ষক কাহিনী।
তরুণীর বর্ণনার বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, পাচার হওয়া এই তরুণীর সাথে ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে আসামি হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। টিকটক স্টার বানাতে চেয়ে বা ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে ভিকটিমকে প্রলুদ্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয় বাবু। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে টিকটক হ্যাংআউট এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭/৮শ’ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু। পরে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানব পাচারকারির চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় কৌশলে ভিকটিমকে ভারতে পাচার করে হৃদয় বাবু। পাচারকারি চক্রের খপ্পরে পড়ার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত তারা চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যা লোমহর্ষক কল্প কাহিনিকেও হার মানায়।
জানা গেছে, ভারতে পাচারের পর ভিকটিমকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। এ সময় তারা পাচার হওয়া আরও কয়েকজন বাংলাদেশি ভিকটিমকে সেখানে দেখতে পান। তাদেরকে সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে পাচার করা হয়।
ডিসি বলেন, ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর হাতিরঝিল থানায় অভিযোগকারী ভিকটিমসহ আরও দুইজন পালিয়ে বাংলাদেশ আসেন।
ডিসি আরও বলেন, এই মামলায় এজাহারনামীয় ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, এমন তথ্য পেয়ে অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযানে মঙ্গলবার (১ জুন) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়া কালিয়ানী এলাকা থেকে তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভিকটিমকে পাচারের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, একটি ডায়েরি, চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ভারতীয় সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া অপর দুই আসামি মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের আলোচ্য ভিকটিমসহ পাঁচ শতাধিক ভিকটিমকে সীমান্তের শেষ প্রান্তে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, পাচার হওয়া ভাইরাল ভিডিও’র নির্যাতিতা নারীর সহায়তায় পালিয়ে আসা এক কিশোরী রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন। মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/এএম