তিন মূল নীতিতে ভর করে ‘নাসিক’ বদলে দিতে চান বাবু
২ জুন ২০২১ ১৫:৫৯
নারায়ণগঞ্জ: এই বছরের শেষ ভাগে অনুষ্ঠিত হতে পারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচনের জোয়ার না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে চলছে নির্বাচনী আলোচনা। শহরের নানা প্রান্তে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। ঈদুল ফিতর থেকে একটু ব্যতিক্রমি আদলে প্রচারণা চালাচ্ছেন নগরীর নতুন মুখ কামরুল ইসলাম বাবু। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে কোনো ধরনের পদ-পদবী না থাকলেও দলটির সমর্থন প্রত্যাশা করছেন তিনি।
বুধবার (২ জুন) নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নগরবাসীকে কামরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘উন্নয়ন, নাগরিক সেবা ও রাজস্ব আদায়— এই তিন নীতির ওপর ভর করে আমি বদলে দিতে চাই নারায়ণগঞ্জকে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মের স্বভাবসুলভ তাপদাহ এবং বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ –এর কবলে পড়ে আমরা ভালো নেই। যান্ত্রিক জীবনের গতানুগতিক গতিপথ গতিরোধকে খানিকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবুও আমাদের জীবনের লাল-নীল সংসারের কোনো কিছুই যেন থেমে নেই। সমাজের রাস্তায় হেঁটে যেয়ে বলছি, বৃষ্টি তুমি মিষ্টি হয়ে এসো, প্রাণঘাতী হয়ে বজ্রের হুংকারে কালোঝড় হয়ে এসো না।’
‘প্রকৃতিও এবার যেন ছাড় দিতে চাইছে না। তাই তো গেল প্রায় দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাসের মতো উপদ্রব এসে বলছে, তোমরা মানুষ হও। এমন একটা জটিল বাস্তবতার সাক্ষী হয়ে প্রিয় শহর নারায়ণগঞ্জের জন্য যখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে গত বছর রাজনৈতিক ছদ্দাবরণে গোষ্ঠীগত স্বার্থে জনশ্রেণির পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই আমি অঙ্গীকার করেছিলাম— সেখানে খানিকটা মৌসুমি পাখির মতো করে এসে ২০২১ সালের মধ্যভাগে বলছি, আমি নতুন কিছু ভাবছি’— বলেন কামরুল ইসলাম বাবু।
তিনি বলেন, ‘সমাজের টিকে থাকা বাঙালি মুখগুলোর দিকে তাকালেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মায়াবী মুখের পুরুষালী ব্যক্তিসত্তা ধরা দেয়। তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। মনে হয়, ওই লোকটির স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দীপ্ত উচ্চারণ থেকে কার্যকরী উদ্যোগে আজকের প্রজন্ম ভাবতে পেরেছে কি না। প্রকৃতি বলছে, একজন অন্তত পেরেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পেরেছেন। তাই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
‘আমরা এখন দেশের বাইরে গিয়েও বলতে পারছি- আমাদের নেত্রীর নাম শেখ হাসিনা। গর্ব করে বলা যাচ্ছে যে, পঞ্চাশ বছরের বাংলাদেশের অর্জনে দুইটি উজ্জ্বল নক্ষত্রই কেবল বাংলার আকাশে প্রতিভাত। একজন বঙ্গবন্ধু, অন্যজন শেখ হাসিনা। এই দুই জন মানুষের জন্য তাই যখন তখন রাস্তায় নামা যায়’— বলেন কামরুল ইসলাম বাবু।
তিনি বলেন, ‘হে সাংবাদিক সমাজ, আপনারা আমার সম্পদের হিসাব জানিয়ে দিন রাষ্ট্রকে, আমার প্রিয় দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, সরকারকে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে জানিয়ে দিন, এই লোকটির বৈষয়িক বৃত্তান্ত।’
বাবু বলেন, ‘কালজয়ী রাজনৈতিক নেতৃত্ব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু চাইতেন, গণতন্ত্র, জাতীয়তা, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা । এই চারটি মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ। জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মহড়ায় দেশ এগিয়ে যাবে এবং প্রচলিত গণতন্ত্রের তীক্ষ্ণ দলীয় বিভাজনকে ছাপিয়ে যেয়ে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার এমন স্বপ্নবাজ চরিত্র আর কোথায়? একজন সাধারণ কামরুল ইসলাম বাবু বঙ্গবন্ধুর মুল চারটি নীতিকে ধারণ করে।’
তিনি বলেন, ‘অকাল প্রয়াত আনিসুল হক দলীয় পদবী নিয়ে নয়, দলীয় সমর্থন নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, একজন আনিসুলের হকের ক্যারিয়ার একদিনে গড়ে ওঠেনি। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হওয়া, ব্যবসায়ী নেতা হওয়া— মোদ্দাকথা, আলাদা একটা ইমেজ সৃষ্টি হওয়ার পরেই তিনি গ্রহণযোগ্য সত্তা হিসাবে নিজের জাতকে চেনাতে সক্ষম হন। আর আমি? আমি নেহাত সাধারণ এক মানুষ। আমার মধ্যেও একটা ক্ষমতা আছে। সেটা আপনারাও জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন। আমি সমাজের মানুষগুলোকে প্রতিটা অহোরাত্রে আলাদা করে ভালবাসতে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ি। যারা এই শহরে আমাকে চেনে বা জানে তেমন সাক্ষী দিতে অনেকেই মিছিলটাকে বড় করে শ্লোগানে মুখর হবে। হ্যাঁ, এটাই আমার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা দিয়েই আমি নগরীর চাকর হতে চাই। আমি বলতে চাই, নাসিক ট্রেনের চালক হতে আমি প্রস্তুত।’
সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু পরিকল্পনাও তুলে ধরেন কামরুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, ‘সবুজ নারায়ণগঞ্জ বিনির্মাণে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একটি করে পাঠাগারের ব্যবস্থা করা এবং মন ও মননের সাংস্কৃতিক বিকাশে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ