ব্রাজিলের এক শহরে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে এনেছে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন
২ জুন ২০২১ ২০:৪৮
ব্রাজিলের একটি শহরে প্রায় সব বাসিন্দার শরীরের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর শহরটি পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। একটি শহরের সকল প্রাপ্তবয়স্কদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনলে কী ফলাফল আসে—তা জানতেই গবেষকরা এই শহরটিকে বেছে নিয়েছিলেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন।
৪৫ হাজার বাসিন্দার সেরেনা শহরে সকল প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে চীনের তৈরি সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এতে দেখা যায়, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শেষে মহামারি পূর্ববর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া পুরোপুরি সম্ভব। অপ্রাপ্তবয়স্ক যারা ভ্যাকসিন নেননি, তারাও সুরক্ষিত।
গবেষকরা জানান, বর্তমানে ওই শহরে মাত্র এক নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি ভ্যাকসিন নেননি। মূলত চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের পরিবর্তে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ব্রাজিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। দেশটিতে করোনার একাধিক ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। ব্রাজিলে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
চিকিৎসকরা বলছেন, এতদিন শহরটির হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ঢল নেমেছিল। এখন রোগীর চাপ নেই বললেই চলে। ফলে তারা এখন কর্মস্থলের পরিবর্তে আগের মতো বাড়িতেই অন্তত দুপুরের খাবার খেতে পারছেন, ছুটিও উপভোগ করছেন। তাছাড়া অবসরে তারা অন্যান্য এলাকার সহকর্মীদের সাহায্য করছেন।
ওই গবেষণার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকরা জানান, সেরেনা শহরে আগের মতোই জীবন ফিরে এসেছে। এখন প্রতিবেশীদের আড্ডায় যোগ দিতে বাধা নেই কারো, ছুটির দিনে বার্বিকিউ পার্টির আয়োজনেও নেই ভয়। বাইরের শহর থেকে এখন সেরেনায় পা রাখছেন আগন্তুকরা। এরা আগে হয়ত কখনই সেরেনায় আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। কিন্তু এবার তারা চুল কাটতে বা রেস্টুরেন্টে সময় কাটাতে সেরেনাকেই বেছে নিচ্ছে।
ওই শহরের এক দোকানের কর্মচারী রোজেরিও সিলভা বলেন, ‘আমরা এখন পুরোপুরি আগের জীবনে ফিরে গেছি। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও দোকানে মানুষ আসত না, এখানে কিছু খেতো না, আর কেউ আসলেও আমি অন্তত আমাদের বাথরুম ব্যবহার করতে দিতাম না। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে’।
সেরেনা শহরের এই সাফল্যের গল্প এমন সময় উচ্চারিত হচ্ছে, যখন ব্রাজিলের অন্যান্য শহরে মানুষের জীবন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ব্রাজিলের অন্যান্য এলাকায় এখনও করোনাভাইরাসের অভিঘাত চরম পর্যায়ে রয়েছে। মহামারি ঠেকাতে সরকারি নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিধিনিষেধে কার্যত আতঙ্কিত বন্দী জীবন পার করছেন তারা।
সেরেনা শহরের এ সাফল্য এসেছে চীনের সিনোভ্যাক নামক প্রতিষ্ঠানের তৈরি ভ্যাকসিনটি গণহারে প্রয়োগের মাধ্যমে। মূলত একটি শহরের সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনলে কী ফল হয় তা জানতেই এ প্রকল্প নেওয়া হয়। এ ভ্যাকসিন প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘প্রজেক্ট এস’। চার মাস মেয়াদী এ প্রকল্পের মাধ্যমে গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সেরেনা শহরের করোনা পরিস্থিতির তুলনা করা হয়।
সোমবার প্রকল্পের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, সেরেনা শহরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির হার কমে গেছে ৮৬ শতাংশ। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে বলা হয়, কোনো শহর বা দেশে যদি তিন চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীকে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় তাহলে মহামারি দমন করা সম্ভব। তবে গবেষণার এ ফল এখনও কোনো পিআর রিভিউড জার্নালে প্রকাশ হয়নি।
গবেষণাটির একজন সমন্বয়ক সাও পাওলোর বুটান্টান ইনস্টিটউটের পরিচালক রিকার্ডো পালাসিও বলেন, ‘এই গবেষণা থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ফলটি আমরা পেয়েছি, তা হলো, আমরা বুঝতে পেরেছি পুরো জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন না দিয়েও মহামারিটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব’।
সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের এমন সফলতা স্বল্পআয়ের দেশগুলোর জন্য আশার খবর। কেননা এটি মডার্না বা ফাইজারের মতো ভ্যাকসিনের চেয়ে সস্তা ও সহজে সংরক্ষণযোগ্য।
এ গবেষণার মাধ্যমে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের এমন সাফল্যের গল্প যখন গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে বিশ্ব গণমাধ্যম, ঠিক তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুন) জরুরি ব্যবহারের জন্য সিনোভ্যাক বায়োটেক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এ সংস্থাটি।
ভ্যাকসিনটি অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসুস বলেন, চীনের তৈরি সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনটি সহজ সংরক্ষণ করা যায় তাই এটি স্বল্পআয়ের দেশগুলোর জন্য উপযুক্ত।
উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিনোভ্যাক বায়োটেক উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন চীনের জনসাধারণের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিল বেইজিং।
সারাবাংলা/আইই