Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হারানো সাথীদের স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২১ ২১:৪৭

ঢাকা: জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেছেন সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ নেতা বলেছেন, চলমান সংসদে করনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে অনেক অনেক সাথীকে হারিয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি আদেশ দিয়ে খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আমি আর আমার ছোটবোন রেহানা বেঁচে ছিলাম আমাদের বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। ৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল আমরা করি আর সেই বিলটি উপস্থাপন করেছিল আব্দুল মতিন খসরু। তার সেই আবেগ ভরা বক্তৃতা এখনও আমার কানে বাজে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২ জুন) জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায়  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাকে প্রথমে প্রতিমন্ত্রী তারপর মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তা ছাড়া একজন নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ তারপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম মেম্বার করি। সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের নির্বাচন যখন করতে যায় তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়। আমি তাকে বলেছিলাম, বেশি না ঘোরাঘুরি করতে কিন্তু তার আগ্রহ ছিল তাকে জিততেই হবে। আর সারা বাংলাদেশ সফর করে তারপরই করানোভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আমি প্রতিদিন তার স্বাস্থ্যের খবর নিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাকে আর বাঁচানো গেল না, আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংসদ নেতা বলেন, ‘আসলামুল হক আমাদের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম সবকিছু দেশে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। এলাকার উন্নয়ন জন্য কাজ করেছে এ জন্য সে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ ছিল, এলাকার উন্নয়নের জন্য সব থেকে নিবেদিতপ্রাণ ছিল। খুব হঠাৎ করে এই সংসদ চলমান অবস্থায় এসেছিল কিন্তু এখান থেকে হঠাৎ করে সে চলে গেল। তারপরেই তার মৃত্যুর সংবাদটি এলো যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কতজন গণপরিষদ সদস্য তাদেরকেও হারিয়েছি। আজকে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি সেই সংবিধানে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে। যেমন খন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ, গণপরিষদ সদস্য আবুল হাশেম সাহেব। স্বাধীনতার পর যে সংবিধান এবং এটি তাদেরই অবদান। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী সাবেক সারাহ বেগম কবরী, মিরাজ মোল্লা, আমজাদ হোসেন মিলন, এরকম আমরা হারিয়েছি। ফরিদা রহমান তিনিও আমাদের এমপি ছিলেন। ছাত্রলীগ আমরা একসাথেই করেছি। তা ছাড়া আরও অনেক সদস্যকে হারিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকজনের কথা না বললেই না। শামসুজ্জামান সাহেবের কথা বলব। বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান তাকে করেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা আমার দেখা নয়া চীন, প্রত্যেকটা বই প্রকাশে সবসময় আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। দুর্ভাগ্য বেবী মওদুদ এই সংসদের সদস্য ছিল তিনিও আমাদের মাঝে নেই। জামান ভাই সর্বশেষ তিনিও চলে গেলেন। কয়েকজন মিলে আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। একে একে সবাইকে হারিয়ে ফেললাম। জাতির পিতার আরেকটি লেখা স্মৃতিকথা সেটির সংশোধনীর শেষ কাজটি এটা কিন্তু শামসুজ্জামান খান সাহেব করে রেখে গেছেন। আমরা এই বইগুলো যখন বের করি তিনি সব সময় আমাদের পরামর্শ দিতেন। প্রত্যেকটা জিনিস সংশোধনের কাজ, কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কিনা সেটি খুব ভালোভাবে দেখে দিতেন। আমরা যারা কাজ করতাম সকলের জন্য আলাদা আলাদা কলম ছিল।’

‘শামসুজ্জামান সাহেবের জন্য লাল কলম, আমার জন্য একটা সবুজ কলম, বেবির জন্য একটা কালো কলম এভাবে রেখে আমরা যে যখন পারতাম সংশোধন করে প্রত্যেকটা বই প্রকাশ করেছি। বাংলা একাডেমির উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ তিনি করেছেন। এরপর হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাহেব তিনি কাজ করতে শুরু করলেন। কিন্তু পর পর দু’জনই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আসলে সত্যি খুব দুঃখজনক এভাবে একজন একজন করে হারাচ্ছি, যেটি আমাদের জন্য সত্যি খুব কষ্টকর’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্যালেস্টাইনের ঘটনা সত্যি খুব অমানবিক। ছোট্ট শিশুদের কান্না, তাদের সেই অসহায়ত্ব মাতৃ-পিতৃহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানো এটা সহ্য করা যায় না। ইসরাইল একের পর এক এভাবে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ আগেও চালিয়েছে। আমরা এই হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই। যারা মারা গেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’

সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এখন আর কথা বলে না কেন, সেটিই আমার প্রশ্ন। যা হোক আমরা প্যালেস্টানি ভাইদের সঙ্গে সবসময় আছি। প্যালেস্টাইনি ভাইদের সঙ্গে সবসময় আছি। আমাদের সাধ্যমত সবরকম সহযোগিতা অতীতেও করেছি, এখনও করে যাচ্ছি, অবশ্যই করে যাব। ইসরাইলের এই ঘৃণ্য যে আক্রমণ আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।’

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে জীবনটাই হয়ে গেছে এমন কে যে কখন আছে, কে যে কখন নেই তার কোনো হিসেব নেই। করোনার দ্বিতীয়ার্ধ্বও আমরা চেষ্টা করলাম নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের সীমান্ত জেলাগুলোতে আবার দেখা দিয়েছে। সেখানে আবার আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু আমি সবাইকে বলব, স্বাস্থ্যবিধিটা যেন সকলে মেনে চলি। দেশের মানুষের কাছে আমরা এই আহ্বান থাকবে। টিকাদান থেকে শুরু করে সবরকম ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু তারপরেও নিজেরা সুরক্ষিত থাকতে হবে, এটিই চাই।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

প্রধানমন্ত্রী বাজেট অধিবেশন শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর