Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭৮৬ কোটি থেকে ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জুন ২০২১ ০৯:২৪

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। পাঁচ দশকের এই পথচলায় একসময়কার ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা পাওয়া বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বের সামনে উদাহরণে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত এক থেকে দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ঈর্ষণীয়। এমনকি করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারিতেও যখন বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির অনেক দেশই খাবি খাচ্ছে, তখনো বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। দেশের অগ্রগামিতার এই চিত্রের এক প্রতিফলন যেন দেশের জাতীয় বাজেট। স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় বাজেট যেখানে ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার, সেখানে সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে দেশের ৫০তম বাজেটে এসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৬ লাখ কোটি টাকার সীমানা। সে হিসাবে ৫০ বছরের ব্যবধানে ৭৬৮ গুণ বাড়ছে বাজেটের আকার!

বিজ্ঞাপন

১৯৭২ সালের ৩০ জুন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। প্রথম সেই বাজেটটির আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন দেশের ৫০তম বাজেট। আর এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।
তাজউদ্দিন আহমেদ উত্থাপিত প্রথম বাজেটের (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) পর ১৯৮১ সালের ৬ জুন ঘোষণা করা হয় দশম বাজেট। এম সাইফুর রহমান ঘোষিত ওই বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ১২ জুন ১৯৯১-৯২ অর্থবছরের জন্য ২০তম বাজেটও ঘোষণা করেন এম সাইফুর রহমান, বাজেটের আকার ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ২০০১ সালে শাহ এ এম এস কিবরিয়া ঘোষিত ২০০১-০২ অর্থবছরে দেশের ৩০ম বাজেটের আকার ছিল ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ২০২১ সালে দেশের ৪০তম তথা ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর আজ দেশের ৫০তম বাজেট তথা ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, যার সম্ভাব্য আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা।

আগের বছরের বাজেটগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের এই সময় পর্যন্ত অর্থাৎ সবশেষ তের বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ১১ জুন ২০০৯-১০ অর্থবছরের (দেশের ৩৮তম) ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়। ওই বছরই প্রথম বাজেটের আকার লাখ কোটি টাকার গণ্ডি পার হয়।

এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট চার লাখ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় জাতীয় বাজেট। আজ দেশের ৫০তম বাজেটে এসে সেটি ছয় লাখ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

বাজেটের আকার বেড়ে যাওয়ার এই ধারাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১২ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তার অর্থ, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অর্থনীতির আকার বাড়লে বাজেটের আকারও বাড়বে। তবে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, বছর শেষে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে বাজেটের বাড়তি আকার নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেটের বাস্তবায়নের হার কমছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত মান এবং বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে নিছক উচ্চাভিলাষী বাজেট ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না।

বাজেটের মাইলফলক
আগেই বলা হয়েছে, দেশের প্রথম বাজেটটির আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তৃতীয় বাজেটেই সেটি হাজার কোটি টাকার সীমানা অতিক্রম করে। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের সেই বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রথম বাজেটের আকার পেরিয়ে যায় ১০ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক। সেবার বাজেট ছিল ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার।

১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছিল। আর ২০০৩-০৪ অর্থবছরে গিয়ে প্রথম বাজেট ছাড়ায় ৫০ হাজার কোটির ঘর। সে বছর বাজেটের আকার ছিল ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থব্ছরে বাজেটের আকার ছিল ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা করে। টানা দুই অর্থবছরে একই অঙ্কের বাজেটের আর নজির নেই। এর পরের অর্থবছরেই বাজেট পেরিয়ে যায় লাখ কোটি টাকার সীমা, এখন যা ৬ লাখ কোটি টাকা অতিক্রমের অপেক্ষায়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রথম বাজেট বাজেট ২০২১-২২ বাজেট স্পেশাল ২০২১-২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর