১৪ মেগা প্রকল্প বরাদ্দ পাচ্ছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা
৩ জুন ২০২১ ১৩:১৬
ঢাকা: সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা ১৪ মেগা প্রকল্প আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দ পাচ্ছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, সর্বনিম্ন পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা প্রকল্প। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় সুনির্দিষ্টভাবে প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫৭ হাজার ৯৯০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩৯ হাজার ৯৭৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে এসব প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়বে ১৮ হাজার ১০ কোটি ৫ লাখ টাকা। আজ বৃহস্পতিবাবর (৩ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থানের সময় মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য এই বরাদ্দও তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বড় অঙ্কের বরাদ্দ পেতে যাওয়া এই ১৪ মেগা প্রকল্প হলো— পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল-লাইন ৬, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ, ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প তো রয়েছেই।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের বিশেষ মনোযোগে থাকা এই ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬০৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুরু থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত এসব প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরেও বড় একটি অঙ্ক বরাদ্দ থাকছে এসব প্রকল্পের জন্য।
জানতে চাইলে মেগা প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ নির্ধারণকারী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও মেগা প্রকল্পগুলো চালিয়ে যেতে চায় সরকার। সে কারণেই আগামী অর্থবছরের বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোর অনুকুলে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয় থেকে যে পরিমাণ চাহিদা দেওয়া হয়েছে, ততটাই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মেগা প্রকল্পে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। তারা যত বেশি খরচ করতে পারবে আমরা তত বেশিই বরাদ্দ দেবো।
কোন প্রকল্পে বরাদ্দ কত
এই মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য সর্বোচ্চ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, যা ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরর সংশোধিত এডিপিতে এই প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ১০ হাজার ১৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বাড়ছে আট হাজার ২৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা প্রকল্প পাচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ৬৫১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ কমছে ৩৫১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
এছাড়া বাকি প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মাসেতু প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে দুই হাজার ৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ৪৬৪ লাখ টাকা।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। বরাদ্দ বাড়ছে ২২৫ কোটি টাকা।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ৭১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। নতুন বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে তিন হাজার ২২৭ কোটি টাকা ২০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে দুই হাজার ৫১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা। নতুন বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ছয় হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও বাড়ছে এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকা।
সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্টে বরাদ্দ আছে ২৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে ৫৬৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বাড়ছে ৩০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, অর্থাৎ নতুন বরাদ্দ আগের বরাদ্দের দ্বিগুণেরও বেশি।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৯৯০ কোটি টাকা। বাজেটে প্রস্তাব করা হচ্ছে এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৩৫ কোটি টাকা।
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৫২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
ডিপিডিসি এলাকায় বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে এ বছর বরাদ্দ আছে ৮৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে দেয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৫১ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২ হাজার ১৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বেড়ে আগের প্রায় সাড়ে তিন গুণ হচ্ছে এই বরাদ্দ।
এছাড়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ১৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেয়া হচ্ছে ২ হাজার ৮২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রেও বরাদ্দ বাড়ছে ৬৫৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বরাদ্দ কমছে ২ প্রকল্পে
মেট্রোরেল প্রকল্পে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ কমছে ৭৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে এ অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে প্রস্তাব করা হচ্ছে তিন হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এই প্রকল্পেও বরাদ্দ কমছে এক হাজার ৬৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর