তিন অর্থবছরে সবচেয়ে কম বরাদ্দ গৃহায়ণ ও গণপূর্তে
৩ জুন ২০২১ ১৭:৩২
ঢাকা: জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য ৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থ বছরে এই বাজেট ছিল ৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক হাজার ৮০ কোটি টাকা কম। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট ছিল ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসেবে গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট উত্থাপন শুরু করেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার সুপরিকল্পিত নগরায়ন ও সবার জন্য টেকসই আবাসন নিশ্চিতকরণে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি আধুনিক রাষ্ট্রে উপযোগী নগর বিনির্মাণে পুরনো শহরের আধুনিকায়ন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণ, সীমিত ভূমির সাশ্রয় ব্যবহারে বহুতল ভবন নির্মাণে উৎসাহিতকরণ, ভূমির অপচয় রোধে আবাদি জমিতে গৃহনির্মাণ নিরুৎসাহিতকরণ, প্রান্তিক ও আশ্রয়হীন মানুষের আবাসন নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগ সমূহের মধ্যে অন্যতম।
দেশের মেগাসিটি সমূহের আধুনিকায়ন ও পরিকল্পনা মাফিক নির্মাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদের মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হচ্ছে। রাজউকের আওতায় ২০১৬-২০৩৫ সাল মেয়াদী ডিটেইলড এরিয়া প্লান (ড্যাপ) ও চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষের আওতায় ২০২০-২০৪১ সাল মেয়াদী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্লান প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য বড় শহরগুলোর জন্যও অনুরূপ মাস্টার প্লান প্রণয়ন করা হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে শহরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশনের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট দূরীকরণ, পরিবেশ-প্রতিবেশের দূষণহ্রাসসহ নাগরিক জীবনমানের উন্নতি ঘটবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ও রাজধানী ঢাকা শহরের বর্ধিঞ্চুতা বিবেচনায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় চারটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তা ছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতুর উভয়প্রান্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সরকার প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৬২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে আরও ১ হাজার ৫৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি, ঢাকা মহানগরীর আবাসন সমস্যা সমাধানে পূর্বাচল নতুন শহরে পিপিপি পদ্ধতিতে ৬০ হাজার নতুন আবাসিক ফ্ল্যাট ও উত্তরা ১৮ নং সেক্টরে ৮ হাজার ৪০০টি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ প্রত্যয়কে সামনে রেখে সরকার দেশের সকল ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন প্রান্তিক মানুষের আবাসন সমস্যা-সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদানের নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার আওতায় মুজিববর্ষে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক প্রতিটি পরিবারকে একটি করে সেমিপাকা গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ৩৯৪ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি একটি টয়লেট, রান্নাঘর ও বারান্দা থাকবে।
অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে এরইমধ্যে সারাদেশে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৩টি গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক পরিবারকে ভূমি ও গৃহের মালিকানা প্রদান বিশ্বে এটিই প্রথম। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদান করা হবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে এবং দারিদ্র্যের হার কমছে। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম-২য় প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে এ যাবৎ ৩৭ হাজার ২৫৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ১ হাজার ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাজেট বাজেট ২০২১-২২