Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর তুলিতে আঁকা স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বহু দূর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ জুন ২০২১ ১৭:৫৮

ঢাকা: করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলাকে লক্ষ্য রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় তিনি ‍সুদৃঢ় আগামীর পথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি জাতির পিতার তুলিতে আঁকা স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাবে অনকে দূর, বহু দূর, বহু দূর, নিরন্তর।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বাজেট সংসদে উপস্থাপনের অনুমতি দিয়ে তাতে সম্মতিসূচক সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর পরই অর্থমন্ত্রীকে সংঙ্গে নিয়ে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংসদ সদস্যরা করতালি ও টেবিল চাপড়ে তাদেরকে স্বাগত জানান। পরে ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ‘ শীর্ষক বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রীর ১৫৮ পাতার বাজেট বক্তৃতায় করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়া, মানুষের কর্মসংস্থান হারানো, সাধারণ মানুষের জমানো পুঁজি ভেঙে খাওয়ার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও সব সংকট মোকাবিলা করে দেশের জিডিপি বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু গড় আয়। এগুলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এই সমৃদ্ধিকে পুঁজি করে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ বলে আশাবাদ জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি তৃতীয় বাজেট, বাংলাদেশের জন্য এটি ৫০তম বাজেট। পাশাপাশি রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৯তম বাজেট হলেও ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের টানা ১৩তম বাজেট।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনি জানেন— জাতীয় বাজেটে সাধারণত আমরা সুসংহতভাবে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উন্নয়ন রূপরেখা প্রণয়ন করে থাকি। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ বছরও সব তথ্য-উপাত্ত পরিপূর্ণভাবে আমাদের সামনে নেই।

তিনি বলেন, মহান আল্লাহর কৃপায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কোভিড-১৯-এর প্রাথমিক অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশ যখন অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুত গতিতে অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে এগিয়ে চলছিল, তখনই সারাবিশ্বে দ্বিতীয়, কোথাও কোথাও করোনার তৃতীয় অভিঘাত শুরু হয়। এর প্রভাব সর্বত্রই প্রবল। তাই আমাদের এবারের বাজেটেও দেশ ও জাতির উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাধিকার পাচ্ছে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও তাদের জীবন-জীবিকা।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত পাঁচ দশকে অনেক দিক থেকে বাংলাদেশ বদলে গেছে। কেবল বদলায়নি বঙ্গবন্ধুর চিরঞ্জীব আদর্শ এবং জাতির জীবনে সর্বক্ষেত্রে তার সজীব উপস্থিতি। তার নির্দেশিত পথেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এ বছরেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর দুই বরিষ্ঠ প্রবাহের মিলনমেলায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। এর হাত ধরেই বিশ্বসভায় বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। এমনিভাবে ইনশাআল্লাহ অর্জিত হবে আমাদের ২০৩০, ২০৩১, ২০৪১, ২১০০ সালসহ সব স্বপ্নের বাস্তবায়ন।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বক্তব্যের শুরুতেই গভীর বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি জাতির পিতার তুলিতে আঁকা স্বপ্ন সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে অনকে দূর। বহু দূর, বহু দূর, নিরন্তর। যে নামের ওপর দুলছে বাঙালির বিজয়ের পতাকা, দুলতে থাকবে অবিরাম; যার নামের প্রতিটি অক্ষরই আমাদের স্বাধীনতা, দুর্মর ভেঙে ফেলা শত শৃঙ্খল।

ভবিষ্যতের আশাবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ আট বছরের স্থবিরতার পর ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করে। তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয় শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও এ দেশের মানুষ নিরঙ্কুশভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের উন্নয়নের সুযোগ করে দেয়। বর্তমান প্রজন্মের কিংবদন্তি আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একের পর এক রচিত হয় সাফল্য আর উন্নয়নের মহাকাব্য, যা রূপকথার গল্পগাঁথাকেও হার মানায়।

এ পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের অসাধারণ সাফল্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির অর্জন সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। এর যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা একটি সোনালি যুগ অতিক্রম করলাম, যা সারাবিশ্বে সমাদৃত। বঙ্গবন্ধুর পরে অর্থনীতি ও উন্নয়ন, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্রনীতিসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

অর্থমন্ত্রী জানান, গত ১২ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি ছিল। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ওই সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে।

তিনি বলেন, জিডিপির আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থ্যাৎ এক বিলিয়ন ডলারেরও কম। এটি এখন ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।

কোভিডে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১২ বছর ধরে যে গতিতে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে, তাতে দেশে উন্নয়নের একটা ধারাবাহিকতার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি আমাদের ওপর আঘাত হানে, যা আজ পর্যন্ত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ঝুঁকি তৈরি করে এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। ফলে আমাদের এখন স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বাড়ানো ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য দিয়ে আমরা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, একসময়ের বিশ্বের দরিদ্রতম দেশটি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) মতে, অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতি আজ বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতা বাজেট স্পেশাল ২০২১-২২

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর