সংকটকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্ব মহলের আস্থা উপলব্ধি করেছি
৩ জুন ২০২১ ২১:৫৬
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংকটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বনেতাদের আস্থার বিষয়টি নতুন করে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আস্থার প্রতিফলন কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির সংকটকালে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমাদের সব দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের আমরা এই সংকট মোকাবিলায় পাশে পেয়েছি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বক্তৃতায় এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী ১৫৮ পাতার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও সব সংকট মোকাবিলা করে দেশের জিডিপি বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু গড় আয়। এগুলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এই সমৃদ্ধিকে পুঁজি করে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালের পর্যালোচনায় তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে সগৌরবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হয়।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও তুলে ধরেন, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হতে উত্তরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যা সরকারের সঠিক পদক্ষেপ, নীতি ও কৌশলের ফলে সম্ভব হয়েছে। আমাদের জন্য সুখবর হলো আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ন্যূনতম পাঁচটি বছর সময় পাব।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, আমি আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আস্থার প্রতিফলন আমরা সংকটকালে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমাদের সব দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের আমরা এই সংকট মোকাবিলায় পাশে পেয়েছি। মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে আমরা ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ পেয়েছি। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি করোনা ভ্যাকসিন কেনার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে আরও প্রায় ১০৫ কোটি ডলারের ভ্যাকসিন সাপোর্ট পেতে যাচ্ছি। জাপান সরকার, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ওপেক ফান্ড) এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে। আমাদের ঋণ জিডিপি’র হার কম থাকায় ও সার্বিকভাবে ঋণ সক্ষমতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোনো সংশয় না থাকায় এ বিপুল বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া আমাদের জন্য অনেকটাই সহজ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার জন্য আমি আপনার মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি সরকারের কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দিচ্ছি।
অর্থমন্ত্রী আরও প্রত্যাশা জানিয়ে বলেন, আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। সঙ্গত কারণেই কোভিড-১৯-এর প্রভাব বিবেচনায় এবারের বাজেটে প্রাধান্য পাবে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা। দেশের সব মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমেই মূলত অজির্ত হবে ২০৩০ (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট), ২০৩১ (উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ), ২০৪১ (উন্নত দেশ) এবং ২১০০ (ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন)-এর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যসমূহ।
অর্থমন্ত্রী সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার তৃতীয় বাজেট, বাংলাদেশের ৫০তম। পাশাপাশি রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৯তম বাজেট হলেও ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের টানা ১৩তম বাজেট।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট স্পেশাল ২০২১-২২