Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের স্বাস্থ্য গবেষণায় বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা, ব্যয় নিয়ে সংশয়

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ জুন ২০২১ ১০:০৭

ঢাকা: দেশের স্বাস্থ্যখাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল’ নামে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এ তহবিল থেকে দুই অর্থবছরে কোনো খরচই করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এবারও ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সময়ের মতন যদি পরিকল্পনার অভাব থাকে তবে এবারও অব্যবহৃত থেকে যেতে পারে এই বরাদ্দ।

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাতের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেড়েছে গুরুত্ব। এমন অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি গুরুত্ব আরোপ করছেন স্বাস্থ্য গবেষণায়ও। কিন্তু বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করা হলে এই বরাদ্দ ব্যবহার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলমান গবেষণা প্রকল্পে যুক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গবেষণা কাজ করে গেলেও তার জন্য কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে মানবদেহে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রকমের রোগ নিয়েও হচ্ছে গবেষণা। কিন্তু ফান্ডের অভাবে এগুলো বেশি দূর এগুচ্ছে না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হলেও তা জার্নালে প্রকাশিত হয় না। আর এতে করে গবেষকরা নতুন কোনো গবেষণা নিয়ে কাজ করা উৎসাহ পান না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গবেষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমার একটা গবেষণা নিয়ে সারা দেশেই সবাই আলোচনা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি আমার গবেষণা ফলাফল কোনো জার্নালে প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ গবেষণা ফলাফল বিস্তারিত আকারে করার জন্য আরও কিছু কাজ করা প্রয়োজন। সেগুলো ফান্ডের অভাবে করা যাচ্ছে না। মাত্র এক থেকে দুই লাখ টাকা হলেও কিন্তু এই কাজগুলো করে ফেলা যেতো। সরকারিভাবে বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেও কোনো ফান্ড পাইনি। আর তাই এখন বেসরকারিভাবে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে চেষ্টা করে যাচ্ছে ফান্ড যোগাড় করে যাওয়ার।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন গবেষক কাজ করছেন কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিসের প্রভাব নিয়ে। কিন্তু ফান্ডের অভাবে তিনিও বেশিদূর কাজ করতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই গবেষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গবেষণা কাজ চলাকালীন সময়েই বিভিন্ন রকমের খরচ থাকে। একই সঙ্গে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেশন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু খরচ হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থেকে এবার তেমন কোনো সাহায্য পাওয়া যায় নাই। অবশ্য এতে প্রতিষ্ঠানকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ মন্ত্রণালয় থেকেই প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ আসে নাই।’

এই অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর আমাদের স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা বাবদ যে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তার যথার্থ ব্যবহার হয়নি। পরিকল্পনার অভাবে সেটা হয়নি, এমনটা বলা যেতে পারে। ব্যয় করার জন্য যে প্রচারণা ও সিলেকশন করা দরকার সেটাও হয় নাই সময়মতন। কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গবেষণা করার জন্য অ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ৩০ জুন সামনেই আর তাই গতবার যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল তা আর ব্যবহার করা হচ্ছে না।’

তবে ভবিষ্যতে এই বরাদ্দ ব্যবহার করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএসএমএমইউ’র বর্তমান উপাচার্য। কিন্তু পরিকল্পনা করে যদি সেটা ব্যবহার না করা যায় তবে আবারও ব্যবহার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এজন্য তিনি সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন।

তিনি বলেন, ‘এবার যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে গবেষণা বাবদ আশা করছি তাতে অন্তত ৯০ শতাংশ খরচ করার মতন প্রোপোজাল আসবে। সেভাবেই আমি প্রস্তুতি লক্ষ করছি বিভিন্ন জায়গায়। আগে যে বরাদ্দ ছিল তা আসলে সক্ষমতার অভাবে ব্যবহার করা যায় নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে যে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল তাতে আসলে এক দুই লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু আসলে গবেষণা হয় না। ধরেন, পাঁচ কোটি মানে হলো এক লাখ করে ৫০০ জনকে দেওয়া যাবে। সারা বাংলাদেশে ৩০ হাজার সরকারি চিকিৎসক আছেন। এক লাখের বেশি আছে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে। এরপরে আছে নার্স ও টেকনোলজিস্টরা। সবাই কিন্তু চাইলে পারে বিভিন্ন গবেষণা কাজ করতে। এ কারণে আশা করছি এবার যে বাজেট দেওয়া হচ্ছে তা সময় মতন পরিকল্পনা করলে কাজে লাগানো যেতে পারে।’

এক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ার উপরে নির্ভর করতে হবে বলেও জানান বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য। অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে আরও জোরদার ও ত্বরান্বিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণার বিষয়ে গবেষকদের পর্যাপ্ত ধারণা থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণার সঙ্গে যারা যুক্ত থাকে তাদের ইনসেনটিভ দেওয়া প্রয়োজন। যেমন ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যারা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদের কিন্তু কোনো বয়সের বাধা নাই। আমাদেরও মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ৬৫ বছর পরেও গবেষণা করতে চায় তাদেরকে ধরে রাখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আরও গবেষকের সংখ্যা বাড়বে।’

‘একইসঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও গবেষণা বাড়ানো প্রয়োজন যা দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করা যাবে। গবেষণার মাধ্যমে অনেক কিছুই জানা যায় যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। আমাদের এখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পর্যায়ে দেখা যায় অনেকে থিসিস করে। তাদের সবাইকে যদি আমরা গবেষণা খাতে নিয়ে আসতে পারি তবে যে বরাদ্দ দেওয়া হবে তা ব্যবহার করা সম্ভব’, বলেন উপাচার্য।

বিএসএমএমইউতে কোভিড পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোভিড সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পরে মানুষের শরীরে লিভারে কী সমস্যা হয়, কিডনিতে কী সমস্যা হয় এগুলো নিয়েও গবেষণা চলছে। সুতরাং বলা যায় গবেষণার নানা রকম কাজ কিন্তু হচ্ছে। এখন শুধু প্রয়োজন যারা বাজেট বরাদ্দ ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তাদের সক্ষমতা ও সময়মতন পদক্ষেপ। সেটা করতে পারলে আশা করি আমরা বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারবো।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে প্রতিবারই স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানানো হয় যা যৌক্তিক। কিন্তু এটি বাড়ালেও দেখা যায় খরচ করা যায় না। গবেষণা খাতেও বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। পরিকল্পনাহীনতার কারণে দেখা যায় এ বিষয়েও কোনো মনিটরিং থাকে না। আর তাই খরচও করা হয় না। যদি একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তবে এবারও কিভাবে এই বরাদ্দ ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। শুধুমাত্র কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে সারা বিশ্বে অনেক গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের গবেষণার সংখ্যা কম। এর মানে কিন্তু এই না যে আমাদের দেশে গবেষক নেই। কিন্তু সেই গবেষকদের উৎসাহ না দিতে পারার দায় অবশ্যই আছে তাদের যারা বরাদ্দ ব্যয় করার দায়িত্বে থাকে।’

আর তাই আগামীর বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে গবেষকদের উৎসাহিত করার জন্য গবেষণার সুযোগ, পরিবেশ বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন ডা. কামরুল হাসান খান। তিনি বলেন, ‘আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭.৪ শতাংশ। জিডিপির ১.৩ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। এটি মোট বাজেটের ৫.২ শতাংশ। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছর থেকে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। বাড়তি এই বাজেটের বড় একটি অংশই অবশ্য খরচ হবে পরিচালনা খাতে। বাকিটা মূলত ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণাখাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হবে তা ঠিকভাবে বিতরণের করা হচ্ছে কিনা সেগুলো মনিটরিং করতে হবে। শুধুমাত্র মেডিক্যাল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় না বরং অন্যান্য প্রাইভেট-পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও যে গবেষণাগুলো হচ্ছে তাদের উৎসাহ দিতে হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা। সঠিক পরিকল্পনার সঙ্গে কাজ না করলে ও মনিটরিং জোরদার না করলে গবেষকরা উৎসাহ হারাবেন।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বরাদ্দ দিয়ে লাভ কী যদি সেটা ব্যবহার করতে না পারে? এখানে বাজেট খরচ বলতে কী বোঝায়? বাজেট খরচ বলতে বোঝানো হয় সেটি ব্যবহার করা। এখন যদি সেটা কিভাবে করতে হবে— তা না জানা ব্যক্তিকে বরাদ্দ করা বাজেট ব্যবহারের জন্য বলা হয় তবে সেটা কী খরচ হবে?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক গবেষক আছেন যারা গবেষণাটাই করতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের আসলে কাজে লাগাতে পারছি না। দেখা গেলো কেউ একটা গবেষণা করলো। প্রথমত আমরা তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারছি না। আর এরপরে দেখা যায় তাকে আমরা অন্য কোনো কাজে দিয়ে দিলাম। এর ফলে ক্ষতি হয় দেশের। কারণ গবেষককে আমরা তার গবেষণা সম্পর্কিত বিষয়েই কাজ করতে দিতে পারি তবে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। কিন্তু তাকে তো সেখানে আটকে রাখতে হলে কিছুটা অর্থ দিয়েও সাহায্য করতে হবে। নাকি?’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটে বরাদ্দ দিলেই হবে না। সেটা ব্যবহার করার সক্ষমতাও তৈরি করতে হবে। আমরা যে পদ্ধতিতে গবেষণা করি এগুলো আসলে ফলপ্রসূ না তেমন। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে যদি আমরা ইথিক্যাল কমিটি, রিসার্চ রিভিউ কমিটি এগুলো রাখতে পারি তবে উপকারে আসবে। যে গবেষণা করে তাকে একটা প্রণোদনা দেওয়ার বিষয় থাকে। প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর বা কো-ইনভেস্টিগেটর এদের একটা এলাউন্স থাকে। এগুলো সব মিলিয়ে যদি একটা কাঠামো গড়ে তোলা যায় তবে দেশের উপকার হবে।’

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধুমাত্র কাঠামো গড়ে তুললেই হবে না বরং তরুণদেরও কিন্তু গবেষণা বিষয়ে শেখাতে হবে। আমরা মেডিকেল কলেজে যে সব শিক্ষা দিয়ে থাকে তাতে খুব একটা গবেষণার বিষয়ে শেখানো হয় না। যারা এমফিল করে বা অন্যান্য কোর্সে থাকে তাদের শেখাই। এক্ষেত্রে আসলে উৎসাহ দিয়ে গবেষণা কাজে তাদের রাখতে হয়। কিন্তু যদি এখানে তারা আসলে কোনো প্রণোদনা বা আর্থিক সাহায্য না পায় তবে সে তো থাকবে না। আর তাই পরিকল্পনা করে গবেষকদের সাহায্য করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট করা হয় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। আর বরাদ্দ দেওয়া হয় ব্যবহার করার জন্য। কেনো ব্যবহার করতে হবে? কারণ দেশের উন্নয়নে যা প্রয়োজন তা করতে হবে। এখন সেটার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা করার জন্য প্রয়োজন যথাস্থানে সেই ব্যক্তির থাকা যিনি জানেন কিভাবে আসলে ব্যবহার করতে হবে বাজেটের। সেটাই যদি না থাকে তবে বাজেটের ব্যবহার নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। সেটা পাঁচ কোটি হোক আর ১০০ কোটি হোক— যদি সক্ষমতার সঙ্গে পরিকল্পনা না করা যায় তবে কোনো লাভ হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশেই চিকিৎসা গবেষণা ব্যাপক আকারে হোক। সেক্ষেত্রে যদি অর্থের প্রয়োজন হয় তবে সরকার সেই টাকা বরাদ্দ দিক। কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকাটা কীভাবে, কোন খাতে কাদের মাধ্যমে খরচ করা হচ্ছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এ জায়গাতে মনিটরিং ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। যদি সেটি না করা যায় তবে এক হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েও দেশের জন্য কোনো ভালো গবেষণা কাজ আর করবে না কেউ।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণা খাতের বরাদ্দ কাজে লাগিয়ে যে কাজগুলো করা হবে সেগুলোর ফলাফল নিয়েও কাজ করা প্রয়োজন। সেই গবেষণার ফলাফল যদি দেশের পলিসিমেকিংয়ের কাজে ব্যবহার করা যায় তবে বুঝতে হবে যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ব্যবহার করে দেশেরই উপকার হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে গবেষণা খাতের বরাদ্দ ব্যবহার নিয়েও কিন্তু এক ধরণের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ পাওয়া যায়। এর ফলে অনেক আগ্রহী গবেষক উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আর এমন অবস্থায় সুযোগ করে নেই সুবিধাবাদী শ্রেণি। তাদের এড়িয়ে যদি যথাযথ পরিকল্পনা করে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে সেটি দেশের ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা পলিসি মেকিংয়ের কাজে ব্যবহার করা যায় সেক্ষেত্রে ১০০ কোটি কিন্তু কম বরাদ্দ না।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাজেট বক্তৃতায় আ হ ম মুস্তফা কামাল চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের গবেষণার উন্নয়নে সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এ তহবিলের জন্য চলতি অর্থবছরের ন্যায় আগামী অর্থবছরেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে এবং তহবিলটি কার্যকরের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

সারাবাংলা/এসবি/এমও


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর