স্বচ্ছ রূপরেখা নেই বাজেটে, ঘাটতি পূরণ নিয়ে শঙ্কা সিপিডি’র
৪ জুন ২০২১ ১৪:৫৬
ঢাকা: জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক ও স্বচ্ছ রূপরেখা বাজেটে নেই বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একইসঙ্গে বাজেটকে কাঠামোগত দুর্বল বলেও আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। বাজেটের ঘাটতি পূরণ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি।
শুক্রবার (৪ জুন) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের পর্যালোচনা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এ বছর বাজেটে কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তার একটা স্বচ্ছতা রয়েছে, কিন্তু সেই চিন্তার স্বচ্ছতার সঙ্গে বরাদ্দ কিংবা পদক্ষেপের মিল পাওয়া যাচ্ছেনা। এখানে যদিও অনেক কিছু বলা হয়েছে, বলা হয়েছে আমরা জীবন ও জীবিকার বাজেট নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। সেই ধরণের পদক্ষেপ আমরা স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থান; এডিপির ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল এই তিনটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, কিন্তু আমরা বরাদ্দের ক্ষেত্রে সেটি দেখছি না। বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা ভিন্ন হয়েছে।’
ফাহমিদা বলেন, ‘যে জীবন ও জীবিকার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাবো বলা হচ্ছে, কিন্তু এখানে কী ধরণের রিফর্ম দরকার, কী ধরণের সংস্কার দরকার, কী ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার, সেটা কীভাবে করবো তার কোন সঠিক ও স্বচ্ছ পরিকল্পনা নেই। বাজেট তো এক বছরের, কিন্তু করোনা কতোদিন থাকবে তা আমরা কেউ জানি না। টিকা দেওয়ার জন্যে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা একদিকে, অন্যদিকে অর্থনীতির যে ক্ষতিটা হলো, কয়েক বছর আমরা পিছিয়ে যাবো, সেই পিছিয়ে যাওয়া পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আগামী ৩ থেকে ৫ বছরে কী ধরণের কাজ করবো সেই ধরণের মধ্য মেয়াদী নীতিমালা নেই। আমরা বলেছিলাম মধ্যমেয়াদী নীতিমালা থাকা দরকার। বাজেটে নতুন করে জীবন ও জীবিকাকে প্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে যাবো সেটা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক এবং স্বচ্ছ রূপরেখা দেখতে পাচ্ছি না।’
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বাজেট কাঠামোগতভাবে দুর্বল। বাজেট প্রণয়নে যে অনুমিতিগুলো ধরা হয় সেগুলো দুর্বলভাবে ধরা হয়েছে। বাজেটটি করোনাকালীন হলেও এটিকে চলমান বাজেটই মনে হচ্ছে। বাজেটে আয়, ভোগ ও সম্পদ বৈষম্য হ্রাসের যে ফিলোসফি থাকে, প্রত্যক্ষভাবে এই বাজেটে তা নেই। নতুন দরিদ্র কিংবা নতুনভাবে কর্মহীন হয়ে পড়াদের জন্য কিছু নেই।’
বাজেট ঘাটতি সম্পর্কে সিপিডির ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি কোথা থেকে আসবে সেটা বড় প্রশ্ন। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬.২ শতাংশ ধরা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস থেকে বাজেট ঘাটতি পূরণের বিষয়টি ইতিবাচক দিক, এটা আকাঙ্ক্ষিত। তবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১০ মাসের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে পুরো অর্থবছর কেমন হতে যাচ্ছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি ঠিক করা হয়নি। আমরা এখানে দুর্বল অবস্থায় রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের বিষয়ে বাজেটে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় রাজস্ব আহরণ ১০.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে কতটুকু সম্ভব হবে, সে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আছে। সিপিডি পর্যালোচনায় দেখতে পায় রাজস্ব আহরণ ৩০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৯.৬ শতাংশ। বলা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হবে। ব্যয় ঠিক করে আয়ের চিন্তাধারা থেকে এনবিআরের ওপর রাজস্ব আদায়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। যা আসলে অর্জন করা সম্ভব হয় না।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও