টেলিভিশনের বিশাল নেতা হলে আওয়ামী লীগ আগাবে না: মির্জা আজম
৪ জুন ২০২১ ১৬:৪৪
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, টেলিভিশন ক্যামেরা আছে, চেহারা দেখাই গেলেন পরে টেলিভিশনে দেখাইল, আপনারা বিশাল নেতার পরিচিত পাবেন কিন্তু আওয়ামী লীগ আগাবে না।
শুক্রবার (৪ জুন) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম প্রদান ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত মির্জা আজম বিগত সময়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে গঠনতান্ত্রিক নির্দেশনাগুলো মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যে কোন সহযোগী সংগঠনেরও যদি ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন হয়, কত জাঁকজমকভাবে সম্মেলন হয়, আর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আমরা সেই কালচারে চলে গিয়েছিলাম সম্মেলন ছাড়া শুধু সিভি দেখে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা।’
তাই আগামী দিনে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অসহযোগিতার কারণে যেন মহানগরে কোথাও কোনো সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয় বিষয়েও সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক এলাকা ধরে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট ইউনিট কমিটি গঠন করার নির্দেশনার কথা তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, সেই এলাকার মধ্যে বসবাসরত কেন্দ্রীয় নেতা, মহানগরের নেতা, থানার নেতা, ওয়ার্ডের নেতা সবাই সদস্য পদ নবায়ন করবেন। এরপরেও কমপক্ষে ১০০জন নতুন প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। সমাজের গ্রহণযোগ্য মানুষ, যারা সমাজে ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত, যাদের আওয়ামী লীগের জন্য হৃদয় কান্দে কিন্তু পদ-পদবিতে নেই, এই ধরনের মানুষ খুঁজে খুঁজে বের করে বাড়িতে গিয়ে তাকে সদস্য করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু বাড়িতে গিয়ে লোক সংগ্রহ করার দরকার কী? আমার নিজের আত্মীয় আছে, গাড়ির ড্রাইভার আছে, বাবুর্চি আছে, এদের মধ্যে দেড়শ বানাইয়া লইমু। তারপর কমিটি করমু ৩৭ সদস্যের আমার বাড়ির মধ্য থেকে! অন্যদেরও দরকার কী? তাহলে কি আওয়ামী লীগ আগাবে— এমন প্রশ্ন তোলেন মির্জা আজম।
মহানগর নেতাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের প্রথম যে ইউনিট কমিটির সম্মেলনটা করবেন, সেই সম্মেলনে আমি আগ্রহ প্রকাশ করছি সম্মেলনে উপস্থিত থাকব।’
মির্জা আজম বলেন, ‘ঢাকা শহরে যারা বসবাস করেন, প্রত্যেকের কিন্তু একটা গ্রামে বাড়ি আছে, বিশ্বাস করি। সবাই জন্মসূত্রে ঢাকা শহরে এটা নাও হতে পারেন। আপনাদের নিজের একটা জেলা আছে, থানা, ইউনিয়ন আছে। আপনার নিজের গ্রামে যদি যান সেখানকার ইউনিয়নে যদি যান, ইউনিয়নের কোনো একটা জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ বাজার আছে সেখানেও যদি আওয়ামী লীগ খোঁজেন, কম করে হলেও সেই ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড আছে, একটা অফিস আছে। সেই অফিসগুলোতে বাজারের সময় হলেও দশ-বিশ আওয়ামী লীগের লোকজন বসে। থানা পর্যায়ে তো আছেই, ইউনিয়ন পর্যায়েও আছে। কোন কোন জায়গায় ইউনিয়ন পর্যায়েও নিজস্ব অফিস করে ফেলেছে। থানা পর্যায়ে অনেক আগেই নিজস্ব অফিস করা আছে।’
‘কিন্তু আজকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, একটা জেলার মর্যাদা সম্পূর্ণ। আপনারা কিন্তু আজকে ভাড়াটিয়া, অফিস নিয়া এই প্রোগ্রামটা করছেন। নিজের কোনো অফিস নেই।’
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিত্তশালী মানুষরা কোথায় বসবাস করেন, ঢাকা মহানগরে। আর বিত্তশালী মানুষরাই মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা কিন্তু হয়েছেন। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে কমবেশি সবারই অর্থনৈতিক, সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আপনাদের একটা বসার জায়গা নেই, এটি কিন্তু অত্যন্ত লজ্জাকর।
মহানগর উত্তরে ২৭টি থানা এবং ৭৫টি ওয়ার্ডের নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা আজম বলেন, ‘আপনারা ঢাকা শহরের কোথাও ৫ কাটা জমি কিনে সেই জমির উপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস করবেন, এটা কি খুব কঠিন কাজ। খুব কঠিন কাজ না। খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাও যদি হয়, ৫ কাটা জমি কিনতে ২০ কোটি টাকা লাগবে। এই ২০ কোটি টাকা কি এই জায়গা থেকে তোলা কি খুব বড় কঠিন কাজ? যদি কঠিনই হয়, তাহলে ৫ হাজার স্কয়ার ফিটের একটা ফ্লোর নিতে পারি না! সেটার সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা দাম হবে। সেটা তো আমার এই জায়গার ৫ জন নেতা দিয়ে দিতে পারে! এই পাশে যারা বসে আছেন (মহানগর নেতা), ৮জন এমপি, আর যদি থানা পর্যায়ে ভাগ করে নেই তাহলে ভাগে কয় টাকা করে পড়বে? এক এক জনের ভাগে তো এক লাখ টাকা করেও নিতে পারবেন না!’
নিজস্ব কার্যালয় যদি না থাকে তাহলে কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আসে না দাবি করেন মির্জা আজম। তিনি বলেন, ‘নেতারা প্রতিদিন অফিসে আসবেন, এরপরে যারা থানার নেতা হয়েছেন, আপনারাও আপানদের নিজের লিডারশিপকে সংহত করার জন্য প্রত্যেক থানায় আওয়ামী লীগের একটা করে অফিস করা উচিত এবং এটি করতে হবে।’
এটা যদি করতে না পারেন? শুধুমাত্র আজকে ঢাকা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ২৩ নম্বর অফিসে আসলেন; কাদের ভাই আছে, টেলিভিশন ক্যামেরা আছে, চেহারা দেখাই গেলেন, টেলিভিশনে দেখাইল আপনারা বিশাল নেতা, ক্রেডিট পাবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ আগাবে না।
মির্জা আজম আরও বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাত দখল করে সাইনবোর্ড লকটাই দিছেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়, এগুলো ভাইঙ্গা পালাইবেন। নিজেরা অফিস কিনতে না পারেন, না হলে অফিস ভাড়া নিবেন। কিন্তু রাস্তার ফুটপাতের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লটকাইয়েন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুইটা অনুরোধ করলাম কাদের ভাইয়ের উপস্থিতিতে। আপনারা যদি টাকা দিয়ে অফিস করতে যান, নিজেরাও যদি চাঁদা তুলে কন যে ৫ কোটি জোগাড় করছি, অফিস করতে ১০ কোটি টাকা লাগে। আমি বলতেছি কাদের ভাইয়ের সুপারিশ নিয়ে নেত্রীর কাছে যান নেত্রী এখনই ৫ কোটি টাকা দিয়ে দেবে, আপনাদের অফিসের জন্য। তবে ১০ কোটির মধ্যে ৫ কোটি সবাই মিলে জোগাড় করেছেন, আর ৫ কোটির জন্য নেত্রীর কাছে যাবেন কি না, সিদ্ধান্ত নেবেন?’
মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রধান অতিথির কাছ থেকে সদস্য নবায়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এরপর দুইজন নারী সদস্য নবায়ন ফরম সংগ্রহ করেন এবং বিশেষ শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি হিসেবে একজন শিক্ষক, একজন প্রকৌশলী ও একজন উকিলকে সদস্য ফরম প্রদান করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি।
সারাবাংলা/এনআর/একে