বর্তমান সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই: মির্জা ফখরুল
৫ জুন ২০২১ ১৭:৪২
ঢাকা: বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই এবং জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধও নেই।
পরিবেশ দিবসের আলোচনায় পরিবেশ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে সরকারদলীয় নেতাদের অঙ্গীকার (কমিটমেন্ট) প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের, বিশেষ করে সরকারের যারা ক্ষমতায় থাকেন এ ক্ষেত্রে তাদের কমিটমেন্ট অনেক বেশি প্রয়োজন। কিন্তু এখানে বর্তমান সরকার, যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, জনগণের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের প্রতিনিধির প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধও নেই।
শনিবার (৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘বৈশ্বিক দুর্যোগ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে— পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে। পৃথিবী অতি দ্রুত ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। কারণ উন্নত দেশগুলো তাদের স্বার্থে শিল্পোন্নয়ন করেছে। কার্বনের কারণেও ওজন মণ্ডল ফুটো হয়ে গেছে। ফলে পৃথিবীতে উষ্ণতা বেড়েছে। এর ফলে যাবতীয় বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে বিশ্ব নেতাদের অঙ্গীকার প্রয়োজন, তাদের অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পরিবেশের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা ছিল বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষার জন্য। এই যে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী, সে সময় লাখ লাখ গাছ লাগানো হয়েছিল। রাস্তার ধারে গাছ লাগিয়ে সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমান খাল খনন কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তার তিনটি দিক ছিল— প্রকৃতিক পানি সংরক্ষণ, সেখান থেকে ইরিগেশন (সেচ) ও মাছের চাষ করা এবং খালের দুই ধারে বাগান তৈরি করা।
তিনি বলেন, মানুষের অস্তিত্বের কারণে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির দ্বন্দ্ব। মানুষ বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, জীবিকার প্রয়োজনে, সভ্যতার প্রয়োজনে বন নষ্ট করেছে, নদী নষ্ট করেছে, পানি নষ্ট করেছে। বড় বড় কংক্রিটের বস্তি গড়ে তুলেছে। আমাদের দেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে হঠাতে হঠাতে একেবারে পিছু হঠিয়ে ফেলেছে। আগে যে পরিযায়ী পাখিগুলো আসত, সেগুলো এখন আর আসতে পারে না। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি এখন এসবের প্রতিশোধ নিতে শুরু করছে। আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত এই প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করছি।
‘টেকসই পরিবেশ ও অর্থনীতি (সাসটেইনেবল এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি)— এটা যদি আমাদের তৈরি করতে হয় তাহলে কিভাবে নদী, পানি, মাটি ও বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করব, তার ওপর নির্ভর করবে আমি কতটা টেকসেই পরিবেশ ও অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারব’,— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাজেটে পরিবেশের সুরক্ষা এবং করোনার অভিঘাতে দরিদ্র হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ক’দিন আগে বাজেট ঘোষণা হয়েছে। সে বাজেটে দেখুন পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর কত টাকা বরাদ্দ করা আছে বা না আছে! মজার ব্যাপার হচ্ছে— জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি তহবিল আছে। সেখান থেকে গত কয়েক বছরে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই বরাদ্দ খেয়ে ফেলেছে, কাজ করতে পারেনি। তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য হচ্ছে লুটপাট করা। লুট করা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ আমি দেখতে পাই না।
তিনি বলেন, এই যে বড় বড় প্রজেক্ট করেছে, মেগা প্রজেক্ট, এগুলো কেন? আমরা বারবার বলেছি, কোভিড থেকে মানুষকে বাঁচানো— এটাই এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। যারা দিন আনে দিন খায়, আমরা হিসাব করে দেখেছি প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন দরিদ্র হয়ে গেছে। তাদের নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে। সেদিকে সরকারের নজর নেই। তারা হিসাব দিয়েছে এই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেগা প্রজেক্টগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষকে বাঁচানো।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকের সরকার যদি জনগণের হয়, জনগণের ওপর যদি দায়-দায়িত্ব থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে অবশ্যই সেই সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে। বিএনপি সরকার সবসময় সে ধরনের সরকার ছিল। ভবিষ্যতে বিএনপি সে ধরনের সরকার গঠন করতে কাজ করবে।
‘আজ একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই— আমাদের অনেকে হতাশ, কিন্তু হতাশ হবেন না। আমরা নেতারা অনেক সময় হতাশার কথা বলি। হতাশার কথা বললে বাঁচার কোনো পথ থাকবে না। সংগ্রাম-লড়াই চিরন্তন। লড়াই-সংগ্রাম করে করে বেঁচে থাকতে হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আজ দুর্বৃত্ত সরকার, দানব সরকার আমাদের সব অর্জনকে তছনছ করে দিচ্ছে। আমাদের স্বপ্নকে তছনছ করে দিচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। একটি পরিকল্পিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগোতে হবে। হতাশাকে বাদ দিয়ে আশার আলো দেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে,’— বলেন মির্জা ফখরুল।
পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিটিতে ৫ হাজার করে নিম গাছের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠানে ‘পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা ও প্রতিকার’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (মোস্তাফিজ)।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহসম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আক্তার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন রুনু ও পরিবেশবিদ শেখ ফরিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
পরে সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নিম গাছের চারা বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিবসহ উপস্থিত অন্যান্য নেতারা।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর