‘সব প্রাণী খাওয়ায় পরিণতিতে করোনার সংক্রমণ’
৫ জুন ২০২১ ১৮:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি মতবাদ হচ্ছে যে, বিশেষ একটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। সবধরনের প্রাণী খেয়ে ফেলা হচ্ছে। এই যে সবধরনের প্রাণী খেয়ে ফেলা, এর কারণেই আমরা আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছি। করোনা কীভাবে মানুষকে পর্যুদস্ত করছে, সেটা আজ আমরা অনুভব করছি।
শনিবার (৫ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসুচির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যে বাতাস ছাড়া মানুষ টিকতে পারে না, সেই অক্সিজেনটুকু আমরা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছি না। অক্সিজেন গ্রহণের জন্য আমাদের যে শ্বাসতন্ত্র সেটিকে আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী আমরাই। আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু এত উন্নতির পরেও আমরা দেখলাম করোনার কাছে আমরা কত অসহায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সবকিছুকে নিজের প্রয়োজনে মানুষের ব্যবহার করা। অন্যপ্রাণীর প্রয়োজনটাকে কোনোসময়ই মাথায় না রাখা, পরিবেশ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করা- এজন্য আমরা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছি।’
পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে মানুষের অস্তিত্বই আজ হুমকির সম্মুখীন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মানুষের টিকে থাকার জন্য এই পৃথিবী দরকার, কিন্তু পৃথিবীর টিকে থাকার জন্য মানুষের দরকার নেই। পৃথিবীতে বহু প্রাণী এসেছে, বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু পৃথিবী টিকে আছে। মানুষও যদি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর কিছু যায় আসে না। যেভাবে আমরা পরিবেশ প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি, প্রকারান্তরে আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই ধ্বংস করছি, এটিই হচ্ছে বাস্তব সত্য। পরিবেশ প্রকৃতিকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে মানুষ ক্রমাগতভাবে নিজের অস্তিত্বকেই ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে।’
পরিবেশ-প্রকৃতিকে ধ্বংসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিবিদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে ভালো অভ্যাসগুলো জানানো এবং শেখানো। সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানাই, যারা পরিবেশ ধ্বংস করে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করে, প্রকৃতিকে ধ্বংস করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যেন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াই। কারণ মানুষ কিন্তু প্রকৃতির দাস, মানুষকে টিকে থাকার জন্য প্রকৃতির প্রয়োজন। এই পরিবেশ-প্রকৃতি যদি বিনষ্ট হয় তাহলে মানুষের পক্ষে ঠিকে থাকা সম্ভবপর নয়।’
‘ঢাকা শহরের দুই কোটি মানুষ এবং চট্টগ্রাম শহরের প্রায় আশি লাখ মানুষ। এখন নগরবাসী যদি মনে করেন, আমি যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলব আর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সেটি পরিষ্কার করবেন, তাহলে সেই শহর কখনো পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে না। আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র। আমি একজন পরিবেশকর্মী। বিনীত নিবেদন, আসুন প্রত্যেকে তিনটি করে গাছ লাগাই। নিজের প্রয়োজনে পরিবেশ-প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করি। তাহলেই মানুষ এই পৃথিবীতে টিকে থাকবে।‘
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণেই দেশে বৃক্ষরোপণ একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নিতাই কুমার ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার, বিটিভির উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক অনুপ কুমার খাস্তগীর।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ, দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, বিটিভির অনুষ্ঠান প্রিভিউ কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন খাঁন স্বপন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. সেলিম, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম