Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কালো টাকা সাদা করা’ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে টিআইবি’র বিস্ময়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ জুন ২০২১ ২১:৩০

ঢাকা: ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ‘কালো টাকা সাদা করা’ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন অর্থমন্ত্রী। আগামী ৩০ জনের পর দুর্নীতি সহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সুবিধাটি আর না বাড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের একটি কঠোর বার্তা দেবেন বলেও আশা করছে টিআইবি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৫ জুন) টিআইবি থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব বলা হয়। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে ঢালাওভাবে ‘কালো টাকা সাদা করা’র যে অনৈতিক সুযোগ রাখা হয়েছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে সেটি না বাড়ানোয় সৎ করদাতাদের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি মিলেছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে একদিনের ব্যবধানে সেই স্বস্তি উৎকণ্ঠায় পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে ‘কালো টাকা সাদা করা’ নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকাকে টিআইবি সরকারের বোধোদয় হয়েছে মনে করেছিল। সতর্ক সাধুবাদও জানিয়েছিল। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বাজেট অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেশনায় তৈরি একটি সমন্বিত চিন্তার আর্থিক দলিল। কিন্তু সেটি সংসদে উপস্থাপনের পরদিন তারই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সংশয় এবং বাস্তবে ইউ-টার্ন সত্যিই অবাক করার মতো। তার চেয়েও হতাশার বিষয়, ন্যায় ও ন্যায্যতার নিরিখে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চলতি অর্থবছরের পর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মলেনে অর্থমন্ত্রী এমন বললেও কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় বা চাপে তাতে অটল থাকতে পারছেন কি না, তা পরিষ্কার করতে পারেননি।

এর আগে ‘যতদিন অপ্রদর্শিত আয়, ততদিন ঘোষণার সুযোগ’ মর্মে দেওয়া বক্তব্য তথ্য-উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত ছিল না বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছেন, সেটি তার মতো দায়িত্বশীল ব্যাক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ করার ঘটনাকে  ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু থেকেই ছিল। শঙ্কা হচ্ছে, তিনি অন্যায় এই সুবিধার পক্ষে সেই ঢালটি এখন ব্যবহার করতে চাইছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অথচ এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে সরকার কতটা রাজস্ব ক্ষতির স্বীকার হলো, সেটি কোনোভাবেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। যেটিকে সৎ ও বৈধ পন্থায় উপার্জনকারী করদাতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাঁয়তারা বলে মনে করা মোটেই বাহুল্য হবে না।

‘কালো টাকা সাদা করা’র সুযোগ সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধই করছে না বরং  দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে বলেও মন্তব্য করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার অন্যান্য সুযোগও বাতিল করার এখনই সময়। অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকার মধ্যে পার্থক্য যে অতীব ক্ষীণ, তা কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। কোনো না কোনো কৌশলে দুর্নীতিবাজদের তোষণের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকার দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে— এমনটাই প্রত্যাশা।

সব ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও স্বার্থান্বেষী অনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না দিতে সরকারের প্রতি আবারও উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছি টিআইবি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় যত দ্রুত হবে, দেশের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত সুশাসনও তত ত্বরান্বিত হবে বলেও মন্তব্য সংস্থাটির।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

কালো টাকা টিআইবি বাজেট প্রতিক্রিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর