Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩০ মিনিটের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেল চট্টগ্রাম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুন ২০২১ ১৩:০১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মৌসুমের প্রথম টানা মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, অন্তত ২০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টিপাত শুরুর আধাঘন্টারও কম সময়ের মধ্যেই পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টি শুরুর পর এত কম সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা অতীতে দেখা যায়নি। এজন্য তারা বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর বিভিন্ন খালে যে বাঁধ দিয়েছে, তাকে দায়ী করেছেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের আমবাগান আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, রোববার (৬ জুন) সকাল ৮টা থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল নয়টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় মোট ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

আমবাগান আবহাওয়া দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, সকাল আটটা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি শুরু হয়। এক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হয়েছে এবং বৃষ্টির পরিমাণও প্রচুর। বৃষ্টি অব্যাহত আছে।

সরেজমিনের দেখা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার কোথাও হাঁটুর সমান, আবার কয়েকটি স্থানে কোমর সমান পানি উঠেছে। নগরীর ষোলশহর, কাপাসগোলা, চাক্তাই, বাকলিয়া, ডিসি রোড, রাহাতারপুল, রহমতগঞ্জ, হালিশহর, চান্দগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা মো. সোলায়মান সারাবাংলাকে বলেন, নিচু এলাকা হওয়ায় সবসময় বৃষ্টি হলে এখানে পানি ওঠে। এবার বেশি পানি উঠেছে।

আসকারদিঘীর পাড় এলাকা কিছুটা উঁচু হওয়ায় সচরাচর এখানে পানি ওঠে না। কিন্তু জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজের কারণে বড় নালায় বাঁধ দেওয়ায় নালার পাশের নিচু স্থানগুলো প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আসকার দিঘীর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের ছালাম বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা পুতুল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নালার পাড়েই ভবন। বাসার নিচে কোমর সমান পানি হয়েছে। অফিসে যাবার জন্য বের হয়েও যেতে পারিনি।’

নগরীর ডিসি রোডে হাঁটু পরিমাণ পানি উঠেছে। সেখানে সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। বৃষ্টির পানি, কাদায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

ডিসি রোডের বাসিন্দা সাহেদ মুরাদ সাকু বলেন, ‘বাসার নিচে এক হাঁটু পানি উঠেছে। বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিও বাড়ছে। নালা ও খাল দিয়ে পানি যেতে পারছে না।’

নগরীর বিভিন্নস্থানে পানি উঠে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। এছাড়া বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে কর্মস্থলের উদ্দেশ বের হওয়া মানুষের মধ্যে আতঙ্কও তৈরি হয়।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, হঠাৎ টানা বৃষ্টি, জোয়ার এবং বিভিন্ন খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। নগরীর অন্তত ২০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এর চেয়েও কিছুটা বেশি হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকায় তলিয়ে যাবে।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগের আরেক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, এই মৌসুমে প্রথম টানা মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি শুরুর ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হয়েছে। এটা আমরা অতীতে দেখিনি। খালে বাঁধ দেয়ার কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালের ভেতরের অংশে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে জলকপাট ও প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে।

খালে দেওয়া বাঁধের কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতার আশঙ্কার কথা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ অতিবৃষ্টি হয়েছে। তীব্রতা বেশি ছিল। পানি সাময়িকভাবে জমে গেলেও দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এজন্য এটাকে আমরা জলাবদ্ধতা বলছি না। ড্রেন এবং খালের প্রশস্ততা আমরা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য পানি দ্রুত নামছে। খালের যেসব স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কেটে দিয়েছি। আমাদের কুইক রেসপন্স টিম, ইমার্জেন্সি টিম আটকে থাকা পানি সরাতে কাজ করছে।’

নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া দফতরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর অগ্রভাগের প্রভাবে চট্টগ্রাম এবং আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও মাঝারিমাত্রার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সতর্ক অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন পাহাড়ে গেছেন। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করছেন, তাদের সরানোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমাদের ১০০ টা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতির কাজ চলছে। পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।’

সারাবাংলা/আরডি/এএম

চট্টগ্রাম টপ নিউজ বৃষ্টি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর