প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকার বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে
৬ জুন ২০২১ ২৩:০৬
ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকার বিষয়ে একটি অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাজেটে কালো টাকার বিষয়ে যে অস্পষ্টতা রয়েছে তা দূর করা উচিত। শুধু তাই নয়, বাজেটে বলা উচিত, আর কখনও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে রোববার (৬ জুন) সারাবাংলার সঙ্গে এ সংক্রান্ত একান্ত আলাপে ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ না দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য খাতে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকা, করোনায় চাকরি হারানো লোকজনের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ না থাকার সমালোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কর না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। এছাড়াও কোভিড মোকাবিলায় বাজেটে একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার ছিল বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কালো টাকা কারা অপারেটিং করে তাও অনেকে জানে।এই সুযোগগুলো চিরতরে বন্ধ করতে হবে। প্রতিবছরই কালো টাকার মালিকরা একটা করে অঘটন ঘটায়। তাই এবারের বাজেটে কোনোভাবেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফাইন্যানন্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) কর সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এটা মোটেও যুক্তিসঙ্গত হয়নি। কারণ বিকাশ, নগদ, রকেট এরাতো গরিব মানুষকে সেবা দিচ্ছে। এই খাতে কর বাড়ানো হলে বিদেশিরা এদেশে বিনিয়োগ করতে আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমএফএস খাতও সরকারকে ভ্যাট-ট্রাক্স দিচ্ছে।গ ত অর্থবছরে বিকাশ বিভিন্ন খাতে সরকারকে ৬৮০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়েছে। তারা সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে এবং এই ট্যাক্সের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার পর ২০০ টাকা যদি রেভিনিউ হয় তাহলে তারা ৪০ টাকা পায়। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকারের বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা উচিত। কারণ বর্ধিত কর আরোপের ফলে সরকার এই খাত থেকে বড় জোর ৫/৬ কোটি টাকা বেশি কর পেতে পারেন। বিপরীতে এই খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সরকারের এখানে নজর দেওয়া উচিত।’
এবারের বাজেট পুরোটাই ব্যবসাবান্ধব— অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এবারের বাজেট জনবান্ধব না হয়ে কেবল ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। বাজেটেটি ব্যবসা বান্ধবের পাশাপাশি জনবান্ধব হলে আরও ভালো হতো। বিশেষ করে করোনায় যারা চাকরি হারিযেছেন, যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের জন্য বাজেটে কোনো টাকা পয়সা রাখা হয়নি। এটা করলে ভালো হতো। করোনায় যারা গরিব হয়েছেন এক বছরের জন্য হলেও তাদের জন্য কিছু করার দরকার ছিল।’
স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হলেও বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলার করণীয় বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ নেই। বিশেষ করে করোনার আরও একটি টেউ যদি আসে তাহলে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করবো? সে বিষয়ে যদি কোনো দিক নির্দেশনা থাকতো তাহলে ভালো হতো। যদি বলা হতো এতদিনের মধ্যে আমরা এত সংখ্যাক লোককে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসব। তাহলে ভালো হতো। কিংবা যদি বলা হতো আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে কিংবা ২০২২ সালের জুনের মধ্যে আমরা সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসব। এইরকম কোনো রোডম্যাপ না থাকায় অবাক হয়েছি।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সুনিদির্ষ্ট দিকনির্দেশনা যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কবে নাগাদ সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যাবে, তার কোনো রোডম্যাপ নেই। বাজেট বক্তব্যে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে ২৫ লাখ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তাহলে ১২ কোটি লোককে দুই ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চার বছর সময় লাগবে। এটা গ্রহণযোগ্য না। বাজেটে সব নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়েও যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে। এটা স্পষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। ভ্যাকসিন দিতেই যদি চার বছর লেগে যায়, তাহলে আমাদের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা ভুলে যেতে হবে।’
পিআরআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কোম্পানির করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এটা ভালো দিক। পাশাপাশি ব্যাংক বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর কিছুটা কমানোর দরকার ছিল। পৃথিবীর সব দেশে, সব করপোরেট ট্যাক্স একই। অন্যান্য দেশে আলাদা কোনো ট্যাক্স নেই। আমাদের দেশে টেলিকম, টোবাকো এবং আর্থিক খাতে ভিন্ন ভিন্ন ট্যাক্স আরোপে করা রযেছে। এটা উচিত না। আমাদের টেলিকম খাত সবচেয়ে গতিশীল সেক্টর। এই খাতের দিকে নজর দিতে হবে। এসব খাতেও কিছুটা ট্যাক্স কমানো দরকার।’
ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকার বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা করা হলে আমাদের রাজস্ব আয় কমে যাবে। তাই এটা আরও কয়েক বছর থাকুক। মানুষ কর দিতে দিতে অভ্যস্ত হোক।’
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটটি অনেকটা আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি আগের বছরের বাজেটের চেয়ে কিছুটা বেশি বাস্তবসম্মত হয়েছে। বাজেটের মূল ফোকাসটি করোনার ওপর দেওয়া হয়েছে। এটা যুক্তিসঙ্গত।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম
২০২১-২২ অর্থবছর অস্পষ্টতা কালো টাকা ড. আহসান এইচ মনসুর প্রস্তাবিত বাজেট