সজনে পাতার গুঁড়া পণ্য উদ্ভাবন করল বিসিএসআইআর
৭ জুন ২০২১ ২২:৫০
ঢাকা: বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা জনপ্রিয় উদ্ভিদ সজনে (মরিঙ্গা) গাছের পাতার গুঁড়া পণ্য উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা সংস্থা (বিসিএসআইআর)। প্রতিষ্ঠানটির ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার অ্যান্ড ইনোভেশনের (আইটিটিআই) তিন বিজ্ঞানী এ উদ্ভাবনে যুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সঠিক স্থানের পাতা সংগ্রহ করে তা ধুয়ে ধুলোবালিমুক্ত করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় শুকিয়ে সজনে পাতার গুঁড়া পণ্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই গুঁড়াতে তাজা পাতার মতো সব ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড ও মিনারেলস অক্ষুণ্ন থাকে।
সোমবার (৭ জুন) বিকেলে বিসিএসআইআর মিলনায়তনে এই উদ্ভাবিত গুঁড়ার বাজারজাতকরণে রেনেটো লিমিটেডের কনজুমার প্রোডাক্টসের কনসার্ন প্রতিষ্ঠান পূর্নাভা লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এসময় বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখসহ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পের প্রধান উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশে সজনে গাছ কোনো ধরনের যত্ন বা পরিচর্যা ছাড়াই বড় হয়। সব জায়গায় সজনে পাতা নিরাপদ নয় এবং এ পাতা যেকোনোভাবে শুকালে ভিটামিন, ক্লোরোফিল ও অ্যামাইনো এসিড নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত এক টেবিল চামচ সজনে পাতার গুঁড়া শিশুদের দৈনিক অত্যাবশকীয় আমিষ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন চাহিদা পূরণ করতে পারে। এতে রয়েছে কমলালেবুর তুলনায় সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, গাজরের তুলনায় চার গুণ বেশি ভিটামিন এ, দুধের তুলনায় দুই গুণ বেশি আমিষ ও চার গুণ ক্যালসিয়াম, কলার তুলনায় তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম।’
রেজাউল করিম জানান, বয়স্করা প্রতিদিন এক চা চামচ সজনে পাতার গুঁড়া খেলে প্রতিদিনের ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও মিনারেলসের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়। হালকা গরম পানিতে গুঁড়া মিশিয়ে খেতে হবে।
বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ বলেন, ‘সজনে পাতার গুঁড়া শরীরের ইমিউন (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বাড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতা করবে।’
বিজ্ঞানীরা জানান, বিভিন্ন গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী, সজনে পাতার গুঁড়া লিভার, চোখ, ত্বকের রোগ প্রতিরোধ, রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে ডায়াবেটিক ও হৃদরোগ সারাতে কাজ করে।
বিজ্ঞানী রেজাউল করিম জানান, গত দুই দশক ধরে আফ্রিকার খরাপীড়িত দেশগুলোতে ইউএসএইড, ইউএনডিপিসহ কয়েকটি সংস্থা ক্ষুধা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে সজনে গাছ ও পাতার গুঁড়া কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তিনি আরও জানান, প্রতি বছরে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ টন সজনে পাতার গুঁড়া ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে রফতানি হয়ে থাকে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সজনে গুঁড়া উদ্ভাবনে যুক্ত তিন বিজ্ঞানী রেজাউল করিম, ড. মো. রকিবুল হাসান ও দেবব্রত কর্মমকার এবং রেনেটার কনজুমার প্রোডাক্টসের সহযোগী ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান পূর্নাভা লিমিটেডের এম রিনাত রিজভীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর