Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভ্যাকসিন কার্যক্রম ও করোনা মোকাবিলায় সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ জুন ২০২১ ২১:২১

ঢাকা: কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি, নতুন নতুন ধরনের অনুপ্রবেশ, সংক্রমণ রোধের সক্ষমতা ও ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এ অবস্থায় অবিলম্বে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতা সম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি টিকা আমদানির অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৮ জুন) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়।

টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়কালের তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি তৃতীয় দফার এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে। এই গবেষণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ— উভয় পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সারাদেশের ৪৩টি জেলার ৫৯টি টিকা কেন্দ্র দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করে এসব কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩৮৭ জন ভ্যাকসিনগ্রহীতার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ইতিবাচক নানা পদক্ষেপের মধ্যে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সময়ে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন-এক্সপার্টসহ আরটি-পিসিআর নমুনা পরীক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ঢাকায় এক হাজার শয্যার ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত চলমান। পাশ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে গতি সঞ্চার করতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ২৭০০ কোটি টাকার দু’টি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩৬ লাখ দরিদ্র পরিবারে দ্বিতীয়বার ২ হাজার ৫শ টাকা নগদ অর্থ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিপরীতে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পরিকল্পিত উদ্যোগের ঘাটতির কারণে করোনার সংক্রমণ পুনরায় বেড়েছে বলে মনে করছে টিআইবি। গবেষণার তথ্য বরছে, এন্ট্রি পয়েন্টগুলোতে (বিমান ও স্থলবন্দর) সংক্রমিত ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ এবং কোয়ারেন্টাইন করার উদ্যোগের ঘাটতির কারণে কোভিড-১৯-এর নতুন ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নেও ঘাটতি লক্ষ করা যায়।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার এখনো ৩০টি জেলার মধ্যে সীমিত এবং অধিকাংশ পরীক্ষাগার বেসরকারি। বিদ্যমান আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় কিছু নতুন স্ট্রেইন শনাক্তে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার কিটের দাম কমে তিন ভাগের একভাগ হলেও বেসরকারি পরীক্ষাগারের জন্য নির্ধারিত ফি কমানো হয়নি। এখনো পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে কোথাও কোথাও ৪ থেকে ৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়।

চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ উদ্যোগে এখনো ঘাটতি বিদ্যমান বলেও উঠে এসেছে টিআইবি’র গবেষণায়। এতে বলা হয়েছে, সংক্রমণের একবছর তি নমাস পেরিয়ে গেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা হয়নি। বাজেট ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সব জেলায় ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সংকটের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে সাধারণ জনগণ। ভ্যাকসিনের বাফার স্টক সংরক্ষণে দূরদর্শিতার ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

টিআইবি বলছে, ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও কেনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা ও চুক্তিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি বিদ্যমান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাপে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি উৎস ছাড়া বিকল্প উৎস অনুসন্ধানে উদ্যোগের ঘাটতি ছিল। জাতীয় কমিটি ও বিএমআরসি একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ সাড়া না দেওয়ায় ট্রায়াল প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ভাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদনেও দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ও সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যেকার ভ্যাকসিন কেনা সংক্রান্ত চুক্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল প্রকট। ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধিও অনুসরণ করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বিগত দেড় বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে যে ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। সরকারি ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে, জনবল নিয়োগে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, উপযোগিতা নিশ্চিত না করে হাসপাতাল সাময়িকভাবে প্রস্তুত ও তা বন্ধ করার ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ড. জামান বলেন, পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে সরকারের সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট পথরেখার অভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমেও ব্যপক ঘাটতি বিদ্যমান। ভ্যাকসিন নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতিকূলে হওয়ায় এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে অনেকেই ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

করোনা মোকাবিলা টিআইবি ভ্যাকসিন প্রয়োগ সুশাসনের অভাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর