বিরোধ নয়, এমপি-নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের তাগিদ
৮ জুন ২০২১ ২১:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমস্যা নিরসনে কাজ শুরু করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রথম দফায় চট্টগ্রাম দক্ষিণের জেলা ও পাঁচ উপজেলার নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে বসেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতা। বৈঠকে দলীয় সংসদ সদস্য এবং সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কোনো ধরনের বিরোধে না জড়িয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
সেই সঙ্গে আগামী অক্টোবরের মধ্যে পাঁচ উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সম্মেলন এবং ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুন) ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সাংগঠনিক সভা হয়েছে। এতে কেন্দ্রের পক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ছিলেন।
আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ছিলেন।
এছাড়া পাঁচ উপজেলা যথাক্রমে পটিয়া, কর্ণফুলী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত মোট তিনটি। প্রথমত, জেলা-উপজেলায় যারা সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তাদের সঙ্গে এমপিদের সমন্বয় থাকতে হবে এবং সমন্বয়ের ভিত্তিতে সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে। এরপর আগামী অক্টোবরের মধ্যে পাঁচ উপজেলার সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলার সম্মেলন করতে হবে। এরপর জেলা সম্মেলন করতে হবে। আমরা বলেছিলাম, আগে জেলা সম্মেলন হোক, তারপর তৃণমূলের সম্মেলন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা এতে সম্মত হননি।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংগঠনিক গতিশীলতা আনার বিষয়ে কথা হয়েছে। ইউনিটগুলোর সম্মেলন ঘোষিত সময়মতো করতে হবে এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে সবাইকে জানিয়ে জনসমক্ষে করতে হবে। আমাদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এই বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল। একই বছরের ৩ জুলাই লোহাগাড়া উপজেলা এবং ৭ জুলাই সাতকানিয়া উপজেলার সম্মেলন হয়েছে। পটিয়া উপজেলার সম্মেলন হয়েছে ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ চলছে এডহক কমিটি দিয়ে। তিন বছর আগে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয় সম্মেলন ছাড়াই।
সভায় উপস্থিত উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এমন একজন সাংসদের বিরুদ্ধে কয়েকজন তৃণমূল নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, তিনি সরকারি কোনো কর্মকাণ্ডে দলের নেতাদের সম্পৃক্ত করেন না এবং এলাকায় বহিরাগতদের দিয়ে ‘এমপি লীগ’ তৈরি করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে সাংসদের বক্তব্য জানতে চান। সাংসদ বক্তব্য দিলে বিষয়টি তাদের মনঃপুত হয়নি বলে জানিয়ে দেন।
জানতে চাইলে মফিজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে দু’য়েকজন নেতা তাদের ক্ষোভের কথা বলেছেন। এটা ব্যাপক কিছু না। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, এমপি এবং নেতাদের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের বিরোধ না হয়। সমন্বয় করে যেন এলাকায় কাজ করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’
জানতে চাইলে সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খান বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা উনাদের কথা বলেছেন এবং উনারা যথেষ্ঠ সময় পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় দুই নেতা বলেছেন, জনপ্রতিনিধি এবং তৃণমূল নেতৃত্ব মিলেমিশে যাতে সংগঠনকে গতিশীল করা যায়।’
ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংগঠনিক কমিটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় দুই নেতার আরও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম