দিনভর আকায়েদের ‘ঢাকা কানেকশন’ খুঁজলো পুলিশ
১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:৩৫ | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৪:৫৪
উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
যুক্তরাস্ট্রের ম্যানহাটানে সন্দেহভাজন হামলাকারী বাংলাদেশী যুবক আকায়েদ উল্লাহর ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে খুব বেশি তথ্য নেই। তবে ঢাকায় মাঝে মধ্যে যাতায়াত করার কারণে দেশীয় কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে কানেকশন রয়েছে কি না সে বিষয়টিই এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তার ব্যাপারে জানতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠে কাজ করছে।
গত সোমবার হামলার পর মঙ্গলবার সারাদিন আকায়েদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছে পুলিশসহ একাধিক সংস্থার সদস্যরা। এর মধ্যে এসবি, এনএসআই, ডিবি ও স্বন্দীপ পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক টিম।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জন্মের সাত মাস পর থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন আকায়েদ। এরপর তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ওই সময় আকায়েদ হাজারীবাগের বায়তুল আমান মসজিদের পাশে একটি বাসায় থাকতেন।
তবে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা সিটি কলেজে গিয়ে আকায়েদ সম্পর্কে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহাজাহান খান সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর ১১ থেকে ১২ হাজার ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হয় সিটি কলেজে। কেউ সঠিক কোনো তথ্যও দিতে পারছে না। কত সালে আকায়েদ সিটি কলেজে পড়াশুনা করেছে তারও সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। তবে তিনি বলেন, ১০ সন্তানের দুই একজন খারাপ হতেই পারে। কলেজের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাউন্সেলিং করা হয়ে থাকে। কাজেই এখান থেকে রেডিক্যালাইসড হওয়ার সুযোগ নেই।
তথ্য ছিল হাজারীবাগে থাকত আকায়েদ। এ ব্যাপারে জানতে হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলিমুজ্জামান বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওসি (তদন্ত) সুবাস কুমার পালের নেতৃত্বে এসআই মোমিনসহ একটি টিম পাঠানো হয়েছিল তবে কিছু পাওয়া যায়নি।
ওসি সুবাস কুমার পাল বলেন, হাজারীবাগের বায়তুল আমান মসজিদের পাশের একটি বাসায় আকায়েদ ও তার পরিবার থাকত। তবে যেখানে থাকত সেখানকার কেউ তাদের সম্পর্কে বলতে পারেননি। সুবাস আরো বলেন, আকায়েদের সাথে ঢাকায় কোনো না কোনো গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। না থাকলে সে কেন বারবার আসত। নিশ্চিত তার জঙ্গি কানেকশন রয়েছে। এটাই এখন খুঁজে বের করা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
আকায়েদের ব্যাপারে জানতে পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সহেলী ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, আকায়েদের ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য নেই। তবে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। যতটুকু জানতে পারছি, ১৬/১৭ বছর আগে তারা স্বন্দীপ থেকে এসে ঢাকায় হাজারীবাগে থাকত। গত সেপ্টেম্বারে ঢাকায় এসেছিল। এরপর সে আমেরিকায় ফিরে যায়। তবে কোথায় পড়াশুনা কিংবা কিসে পড়ত তা জানি না।
গত সেপ্টেম্বারে ঢাকায় এসে ফেরত যায়। তাহলে ঢাকায় কোনো জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে কানেকশন আছে কীনা জানতে চাইলে সহেলী ফেরদৌস বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। কাজ চলছে। থাকলে জানা যাবে।
আকায়েদের ব্যাপারে আমেরিকান সরকার বা সংস্থার পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দফতরকে কোনো কিছু বলেছে কীনা অথবা কিছু জানতে চেয়েছে কীনা জানতে চাইলে এআইজি সহেলী বলেন, এ রকম কোনো কিছু তার জানা নেই।
আর র্যাব সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তথ্য সংগ্রহের জন্য এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে বিকেল ৩টার দিকে জিগাতলার মনেশ্বর রোডের ১০/১ বাসার নীচ তলা থেকে আকায়েদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জুই, শ্বশুড় জুলফিকার হায়দার ও শ্বাশুড়ী মাহফুজা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালে ফ্যামিলি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় যায় আকায়েদ। আমেরিকার ব্রকলিনে পরিবারের সঙ্গে বাস করত। সে ওখানে ড্রাইভার ছিল। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাস্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে আকায়েদ জিগাতলার মেয়ে জুইকে বিয়ে করে। এরপর সে চলে যায়। চলতি বছরের ১০ জুন আকায়েদ ছেলে সন্তানের জনক হলে ১৮ সেপ্টেম্বার দেশে আসেন। এরপর ২২ অক্টোবর আবার আমেরিকায় ফিরে যান। তার শ্বশুর জুলফিকার হায়দার ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলে একটি স্বর্ণের দোকানে কাজ করেন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে তার কোনো জঙ্গি কানেকশন আছে কী না তা জানার চেষ্টা চলছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এমএস
আরও পড়ুন:
নিউইয়র্কে হামলাকারি আকায়েদ উল্লাহ বাংলাদেশি?
পাইপ-বোমাটি আকায়েদ নিজেই বানায়
আকায়েদের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন কঠিন হচ্ছে