হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা, দাবি বয়সসীমা বাড়ানোর
৯ জুন ২০২১ ১৩:০৮
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি যত দীর্ঘ হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের হাহাকার ততোই বাড়ছে। আবেদনের বয়সসীমা নির্ধারিত থাকায় বিপদে রয়েছে ২৭ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে থাকা সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা। আর যাদের বয়স ২৯ বা তার বেশি, তারা এক প্রকার চাকরির আশা ছেড়েই দিয়েছেন। তাই মহামারিতে সব নিয়োগ ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন প্রার্থীরা।
গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন বয়সের চাকরীপ্রার্থী ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন সারাবাংলার এই প্রতিবেদক। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যানারে ‘বয়স বাড়ানোর দাবি’তে আন্দোলনে আসা বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গেও কথা হয়। তারা সবাই যথা সময়ে চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বেশ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সবচেয়ে বেশি হতাশা প্রকাশ করেছেন যাদের আবেদনে বয়স প্রায় শেষের দিকে। তাদের সবার দাবি, সরকার যেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেন। নাহলে এই হতাশা আরও বাড়বে!
তেমনই একজন সরকারি চাকরিপ্রার্থী হলেন রাসেল। তিনি ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন। চলতি বছরেই তার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষে হবে। সরকারি চাকরি করবেন বলে বেসরকারি চাকরির অনেক লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন আগেই। অথচ গত দেড় বছর ধরে কার্যত সরকারি চাকরিতে কোনো পরীক্ষাই দিতে পারছেন না তিনি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করে যদি ব্যর্থ হতাম তাহলে মনকে বুঝানো যেত, কিন্তু চেষ্টার সুযোগই তো পাচ্ছি না।’
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌসুমি সাদিয়া বলেন, ‘সংসারের আগে ক্যারিয়ারকে রেখেছিলাম, এখন সংসারও হয়নি আর চাকরির পরীক্ষাও দিতে পারছি না।’
চাকরির বাজারের প্রবেশ নিয়ে এর চেয়েও করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে এই করোনায়। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে বলছেন তারাও ক্রমান্বয়ে বিষণ্নতায় ডুবে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কেউ আত্মহত্যা করার পর ফেসবুকে সবাই বড় বড় স্ট্যাটাস দেয়। মানুষ লোকদেখানো সহমর্মিতা প্রকাশ করে। অথচ বেঁচে থাকা অবস্থায় কেউ খোঁজও নেয় না, সহায়তাও করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসি, গ্রামের মানুষ তখন থেকেই আমাদেরকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। মায়েরা দিন বদলের আশায় বসে থাকে। একটা চাকরি পেলেই দিন বদলাবে, ছেলে আমার অফিসার হবে। অথচ ছোট একটা চাকরি বয়স চলে যাচ্ছে, কারও কোনো মাথাব্যাথা নাই।’
তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা চলে যাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা হতাশ হলেও অনেকে আবার নেমেছেন আন্দোলনে। চাকরির বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৫ করতে ইতোমধ্যেই সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০ জুনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৫ জুন বিকেল থেকে শাহবাগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
আন্দোলনের আল্টিমেটাম দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হলেও সরকারে এসে সেটি তারা বাস্তবায়ন করছেন না। এখন চাকরির পরীক্ষা দেওয়া ছাড়াই বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি ২০ জুনের মধ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ না করে, তাহলে ২৫ জুন বিকেল থেকে শাহবাগ চত্বরে লাগাতার অবস্থান করবে শিক্ষার্থীরা। তখন আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৬ সাল পর্যন্ত গড় সেশনজট ছিল তিন বছর দুইদিন। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে সেশনজট কমে আসলেও মহামারির কারণে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আবারও দেড় থেকে দুই বছরের সেশনজটে পড়েছে। এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলা প্রায় অনিশ্চিত। ফলে যে সময় নষ্ট হচ্ছে তা ফিরিয়ে দিতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো উচিত বলে দাবি করেন তিনি।
একই দাবিতে আরও অনেক শিক্ষার্থী ও সংগঠন আন্দোলন করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও লেখালেখি হচ্ছে বিস্তর। সমালোচনা করছেন ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষার্থীও।
সেশন জটের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, কিভাবে তাদের সেশনজট কমানো যায়। শিক্ষার্থীদের যে সময়টা মহামারির কারণে ‘অপচয়’ হয়েছে, তা ফিরিয়ে দিতে পারলে ভাল হত বলেও মত দেন তিনি।
এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক একজন মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এতে করে অনেকে চাকরি যেমন পাবে, তেমনই দেশও অনেক মেধাবী ও যোগ্য মানুষের সেবা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারবে।’
সারাবাংলা/টিএস/এনএস