Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হস্তশিল্প খাতকে টিকিয়ে রাখতে রফতানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দাবি

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ জুন ২০২১ ০০:২২

গোলাম আহসান, সভাপতি, বাংলাক্রাফট

ঢাকা: ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেটে হ্যান্ডিক্রাফট তথা হস্তশিল্প পণ্য রফতানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা ছিল। পরে এ প্রণোদনা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এর মধ্যে কাঁচামালের দামসহ উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এই শিল্প খাতের সংশ্লিষ্টদের টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বাংলাক্রাফট) সভাপতি গোলাম আহসান।

তিনি বলছেন, এমন পরিস্থিতিতেও গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এই শিল্প খাতের রফতানি রয়েছে প্রবৃদ্ধির ধারায়। বছর শেষে তা ৩ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সামনের অর্থবছরে এটি আরও বাড়তে পারে, যদি ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারেন। আর ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে হলে বাজেটে ২০ শতাংশ প্রণোদনা ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে করোনা মহামারির প্রভাব কাটাতে সরকারের যে প্রণোদনা প্যাকেজ রয়েছে, তা থেকে ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য।

জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত ২০২১-২২ বাজেট নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে বাংলাক্রাফট সভাপতি গোলাম আহসান এসব কথা বলেন। এসময় হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদনে যুক্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এই খাতে রফতানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাক্রাফট সভাপতি গোলাম আহসান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত হ্যান্ডিক্রাফট রফতানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা ছিল। পরের অর্থবছর প্রণোদনা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এতে সম্ভবনাময় এই শিল্পে যুক্তদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার পরিমাণ ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এই শিল্প খাতের পণ্য উৎপাদনে চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে গোলাম আহসান বলেন, স্থানীয়ভাবে হস্তশিল্পের কাঁচামালের দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি করোনার কারণে উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। বাড়তি খরচের কারণে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ফলে বর্তমানে আমরা বিদেশিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। এ পরিস্থিতিতে তাই আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, হ্যান্ডিক্রাফট শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কমপক্ষে ২০ শতাংশ রফতানি প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি এই খাতের উদ্যেক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ও ন্যূনতম সার্ভিস চার্জে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

হস্তশিল্প খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানালেন গোলাম আহসান। তিনি বলেন, সরকার এসএমই খাতে ৪ শতাংশ সুদে ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা পাওয়া বেশ কঠিন। আমাদের সদস্যরা এসএমই খাতের ঋণ নিতে গেলে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। সরকার ৪ শতাংশ সুদের কথা বললেও ব্যাংকগুলো বলেছে ৪ থেকে ৯ শতাংশ। অন্যান্য জটিলতা তো আছেই। বলতে গেলে, এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বাংলাক্রাফটের কেউ এখান থেকে কোনো ঋণ পায়নি। এই ঋণ পাওয়ার শর্ত আরও শিথিল করতে হবে।

তিনি বলেন, এই শিল্পে আমাদের প্রধান প্রতিযোগী চীন ও ভিয়েতনাম। ওইসব দেশে যারা হ্যান্ডিক্রাফট ব্যবসা করেন, তাদের ব্যাংক সুদের হার খুবই কম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদ লাগেই না। অথচ আমি বছরে ২০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করলেও এসএমই খাত ২ কোটি  টাকা ঋণ চেয়ে পাইনি। সরকার  ঋণ দিতে চাইলেও ব্যাংকগুলো দিতে চায় না। দেশীয় শিল্প বিকাশের স্বার্থে প্রয়োজনে এই খাতের সদস্যদের ২ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা ঋণ দিতে হবে। প্রণোদনার টাকা থেকে ১০০ থেকে ২০০ জনকে অনুদান হিসেবেও অর্থ দিয়ে দিতে পারে সরকার। এতে করে এই খাতটি ঘুরে দাঁড়াবে। দেশও উপকৃত হবে।

হস্তশিল্প খাত ছোট হওয়ার কারণে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে না বলে মনে করেন বাংলাক্রাফট সভাপতি। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই খাতের রফতানিতে প্রবৃদ্ধির ধারা রয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, হস্তশিল্প খাতটি খুবই ছোট হওয়ায় এখন থেকে পাওয়া রাজস্ব সহজে চোখে পড়ছে না। একবছর আগে আমাদের রফতানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ডলার। গত ছয় মাসে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ৬৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর শেষে এই খাতে ৮০ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে বলেও তিনি আশাবাদ জানান।

তিনি বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হলেও চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আগামী অর্থবছরে তা ৪ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে সেটি নির্ভর করবে আমাদের টিকে থাকার ওপর। আমরা টিকে থাকতে পারলে রফতানিতে আরও প্রবৃদ্ধি হবে।

গোলাম আহসান বলেন, আমাদের বর্তমান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম কাঁচামাল। এখন সহজে কাঁচামাল মিলছে না, দামও বেশি। আমরা শতভাগ দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করি। কাঁচামালের মধ্যে অন্যতম হলো পাট, ছন, হোগলা, বাঁশ ও বেত। ভিয়েতনাম এখন ছন, হোগলা, বাঁশ, বেত চাষ করছে। ফলে তাদের কাঁচামাল পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের দেশেও এগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে হবে। এর বাইরে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পাচ্ছি না আমরা। এটি একটি বড় সমস্যা।

গোলাম আহসান জানালেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ২০টির মতো পণ্য বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম পাটজাত পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে জুট ম্যাট, জুট রাফ, জুট ব্যাগ, বাস্কেট ইত্যাদি। এসব পণ্য জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশি রফতানি হয়। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলির মতো দেশগুলোও নতুন ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশ থেকে হস্তশিল্প পণ্য নিচ্ছে। রফতানি হচ্ছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও। এছাড়া চীনেও এসব পণ্য রফতানির প্রস্তুতি চলছে বলে জানালেন তিনি।

বাংলাক্রাফট সভাপতি বলেন, এই শিল্প বিকাশে আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রদর্শনী আয়োজন করছি। প্রদর্শনী আয়োজনের ফলে আমাদের সদস্যদের মধ্যে আরও মেলবন্ধন তৈরি হয়। একইসঙ্গে সদস্যরা তাদের উৎপাদিত পণ্য এখানে প্রদর্শনের সুযোগ পান এবং তাদের পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব হয়।

তিনি জানান, বর্তমানে সংগঠনের সদস্য প্রায় ৫০০ জন। এর মধ্যে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান বিদেশে হস্তশিল্প পণ্য রফতানি করে থাকে। বছরে দেশে হস্তশিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশে ২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়ে থাকে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

গোলাম আহসান প্রণোদনা বাংলাক্রাফট বাংলাক্রাফট সভাপতি হস্তশিল্প হস্তশিল্প পণ্য হস্তশিল্প পণ্য রফতানি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর