Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা সংক্রমণের হার টানা ৭ দিন ১০ শতাংশের বেশি

সারাবাংলা ডেস্ক
১০ জুন ২০২১ ২০:১৫

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। মার্চ থেকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ও সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর হার বাড়তে বাড়তে চূড়ায় ঠেকেছিল এপ্রিলে। এরপর সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমছিল। কিন্তু জুনে এসে ফের পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। পুরো মে মাসে মাত্র তিন দিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশ অতিক্রম করলেও জুনের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে সাত দিনেই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। শুধু তাই নয়, ২৫ এপ্রিলের পর প্রথমবার সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশও ছাড়িয়েছে এর মধ্যেই। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা কমে এলেও জুনে আবার সেটি ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে আগের ২৪ ঘণ্টার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। তা থেকেই দেখা গেছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৩ শতাংশের বেশি। এ নিয়ে দেশে টানা সাত দিন ধরে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে।

এপ্রিল মাসের সংক্রমণের চিত্র

গত এপ্রিল মাসে মাত্র একদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। বাকি ২৯ দিনই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ সংক্রমণের হারও দেখা গেছে এই মাসে।

সার্বিকভাবে এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। এই মাসে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭টি। সে হিসাবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মে মাসের সংক্রমণের চিত্র

মে মাস শুরু হলে সংক্রমণ ও সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে থাকে। মে মাসের ৩১ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মাসে কেবল তিন দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। বাকি দিনগুলোতে সংক্রমণের হার ছিল ৬ থেকে ৯ শতাংশের ঘরে।

গোটা মে মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মাসে নমুনা পরীক্ষা এপ্রিলের তুলনায় কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এ মাসে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৪১ হাজার ৪০৮টি নমুনায়। সে হিসাবে এই মাসে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসের সংক্রমণের হারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

জুনে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ

মে মাসে সংক্রমণ ও সংক্রমণের হারের এই নিম্নগতির চিত্রটি আবার বদলে গেছে জুন মাসে। এই মাসের প্রথম ১০ দিনেই নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৫টি। আর এসব নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৮৫৫টি। এই সংখ্যা মে মাসের প্রায় অর্ধেক। অর্থাৎ জুনের প্রথম দিনেই মে মাসের প্রায় অর্ধেক সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর এই ১০ দিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, যেটি মে মাসের তুলনায় প্রায় ৩ পয়েন্ট বেশি।

সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা কমেছে, সংক্রমণ বেড়েছে অনেকটা

এই জুনের শেষ সাত দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সাত দিনের প্রতিদিনই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে দুই দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি, দুই দিন ছিল ১১ শতাংশের বেশি, দুই দিন ছিল ১২ শতাংশের বেশি। সবশেষ ২৪ ঘণ্টাতে এই হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

গত দুই সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে আগের সপ্তাহে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৯৫টি নমুনায়। সে হিসাবে এই সময়ে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আর এর পরের সপ্তাহ, অর্থাৎ সবশেষ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭২৬টি, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ কম। কিন্তু এই সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় বেশি— ১৪ হাজার ৪১৫টি। শতকরা হারে এটি আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এই সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হারও ছিল বেশি— ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা কি না আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ পয়েন্ট বেশি।

স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে, জনসমাগম এড়িয়ে না চললে এবং সঠিকভাবে মাস্ক না পরলে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এপ্রিলে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করলেও কিছু শিথিলতা ছিল বিধিনিষেধের মধ্যেও। খোলা ছিল দোকানপাট, চলেছে গণপরিবহন। অফিসও খোলা পুরোদমে। তাতে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যায়নি, এড়ানো যায়নি জনসমাগম। এর মধ্যে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বরং জনসমাগম বিভিন্নভাবেই বেড়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর পর বাংলাদেশেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত কিছুদিনে সীমান্ত এলাকাতেও দেখা গেছে সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সবকিছু মিলিয়েই সংক্রমণের এই ধারা ফের ঊর্ধ্বমুখী। আগের মতোই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, জনসমাগম না এড়াতে পারলে এবং মাস্ক না পরলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়।

সারাবাংলা/টিআর

করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর