সেদিন শেখ হাসিনাকে নয় গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিল
১১ জুন ২০২১ ২০:৩৪
ঢাকা: এক/এগারোর সরকার সেদিন শেখ হাসিনাকে নয়, গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিল। কারণ শেখ হাসিনার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। যার ফলে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের দরবারে একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাশীল দেশ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এ মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেনা-সমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ সময় কারাগারের অভ্যন্তরে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির মুখে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে দিনটি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
এস এম কামাল বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের প্রেতাত্মা আর তার আন্তর্জাতিক দোসরদের ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশটা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে প্রবেশ করে। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, ভোটের অধিকার ছিল না, কথা বলার অধিকার ছিল না, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল দিকহারা। সেই অন্ধকার যুগে আলোর দিশা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিয়া-এরশাদ-খালেদার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। ২৮ বছর ধরে জিয়া থেকে খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরে আনলেন। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি করলেন।’
এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘২০০১ সালে আন্তর্জাতিক শক্তিরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতায় যেতে দিলেন না। সেদিনও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন গণতন্ত্রের কন্যা শেখ হাসিনা। কারণ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। তাই সেদিনও তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোটের অত্যাচার নির্যাতন, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, একযোগে সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেই সময় জননত্রেী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার বাংলার মানুষ ঘুরে দাঁড়াল, প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। কিন্তু একটি মহল সেই সময় আবারও ষড়যন্ত্রের ফলে এক/এগারোর সরকার বাংলার জনগণের ওপর চেপে বসে। তারা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ফর্মুলার ষড়যন্ত্র শুরু করে সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই ষড়যন্ত্রের ধারাবহিকতায় তারা প্রথমেই গণতন্ত্রের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করল। গ্রেফতার করে সাবজেলে বন্দি করা হয়।’
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ওরা শুধু গ্রেফতার করে বন্দি করেই থেমে নেই, ওই মহলটি নেত্রীকে মেরে ফেলারও পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু জনগণের আস্থা বিশ্বাসটা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছিল। বাংলার আপামর মানুষ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জননেত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এক/এগারোর সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা মনে করি, সেদিন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিল। শেখ হাসিনা হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আর গণতন্ত্রকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল বলেই আজকে বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য দুর্বার অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে জীবন-জীবিকার চাকা চলমান রেখে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার প্রশংসা করেছেন। তিনি মিয়ানমারের ১১ লাখ বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার জননী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তিনি টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনা করে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করেছেন।’
‘ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবতা দৃশ্যমান। আজকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। আগামী বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলে দেশের অগ্রগতির চাকা, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করেছেন, সমুদ্রসীমা জয় করে আজ ও আগামীর প্রজন্মের জন্য ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করে চলছেন। মুজিববর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন’— বলেন এস এম কামাল।
‘তাই আমরা মনে করি, সেদিন শেখ হাসিনাকে না, গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিল। শেখ হাসিনার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। যার ফলে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের দরবারে একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাশীল দেশ। উন্নয়ন অগ্রগতি অগ্রযাত্রায় সর্বমহলে প্রশংসিত এক সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের সমীহ ও প্রশংসা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। জীবন ও জীবিকার অদম্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এবার বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা দিয়েছেন। যা বাংলাদেশের জন্য ৫০তম বাজেট।’
‘পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৮তম বাজেট হলেও ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের টানা ১৩তম বাজেট। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশ সামনে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। এ লক্ষ্যে তিনি পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ভিশন-২০৪১ প্রণয়ন করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছেন। আজকে ঘরে ঘরে মানুষের দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। যারা শেখ হাসিনার সমালোচনা করত নির্বাচনের সময়, সেই সমালোচকদের মুখে চুনকালি দিয়ে তিনি গতকাল ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করলেন।’
এস এম কামাল বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে সারাদেশে এই ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি জনগণকে ওয়াদা দিলে ওয়াদা পূরণ করেন। একদিনে ৫০টি সারাদেশে একযোগে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করলেন একজন শেখ হাসিনা সব ধর্মের সকল মানুষের মর্যাদাকে গুরুত্ব দেন। তিনি সব ধর্মের সমান অধিকারে বিশ্বাস করেন। তাই শেখ হাসিনাই একমাত্র বিশ্বের প্রধানমন্ত্রী যিনি একদিনে এতগুলো মসজিদের উদ্বোধন ঘোষণা করতে পারেন। এটি কেবল একজন শেখ হাসিনাই পেরেছেন।
শেখ হাসিনা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে এস এম কামাল বলেন, ‘আজকে আমরা শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চাই। কারণ শেখ হাসিনা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা সততা, দেশপ্রেম, সাহসিকতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী এবং মানবিক বিশ্বের প্রধান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
সারাবাংলা/এনআর/একে
আওয়ামী লীগ এস এম কামাল হোসেন কারামুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা