Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পর্বতসম পাহাড় রক্ষা কমিটি মিটিং করে মূষিক প্রসব করে’

সারাবাংলা ডেস্ক
১১ জুন ২০২১ ২০:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্যয় ঘটলেও প্রাণহানি এড়াতে সরকারি উদ্যোগে ঘাটতি দেখছেন বিশিষ্টজনেরা। পাহাড় রক্ষায় দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটির কার্যক্রমকে তারা ‘পর্বতের মূষিক প্রসবে’র সঙ্গে তুলনা করছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং পাহাড় ও নদী রক্ষায় তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শুক্রবার (১১ জুন) বিকেলে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিপলস ভয়েস’ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে বিশিষ্টজনেরা এ দাবি তুলেছেন। ২০০৭ ও ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে এই মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘২০০৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর পাহাড় রক্ষার জন্য সরকারিভাবে একটি কমিটি করা হয়। তারা গত ১৪ বছরে ২১টি সভা করেছে। পর্বতসম পাহাড় রক্ষা কমিটি মিটিং করার পর মূষিক প্রসব করে। তারা ঝূঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের পাহাড় থেকে সরে যেতে মাইকিং করে দায়িত্ব সারে। কিন্তু একবারও ভাবে না, যারা সেখানে বসবাস করে তারা তো এমনি এমনি সেখানে যায়নি। কেউ না কেউ এসব বসতি তৈরি করেছে। অসহায় মানুষ নামমাত্র ভাড়ায় সেখানে বসবাস করতে বাধ্য হয়।’

‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শুধু যখন বৃষ্টি হয়, তখন উচ্ছেদ করতে যায় প্রশাসন। যে ঘরে শিশু আছে, তরুণী আছে, রোগী আছে— তারা কোন ভরসায় বাসস্থান ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে? যারা এসব বাসস্থান তৈরি করে, তারা কি একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরে? ব্যক্তি মালিকানার পাহাড়ের দায় ব্যক্তির। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাহাড়ের দখলের দায় তো তাদের,’— বলেন দেলোয়ার মজুমদার।

পাহাড় কেটে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বায়েজিদ-ভাটিয়ারি লিংক রোডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বায়েজিদ লিংক রোডে নাইনটি ডিগ্রি অ্যাংগেলে বালির পাহাড় কেন, কিভাবে কাটা হলো? এটাই হলো আমাদের আমলাদের আচরণ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, ১১ জুনকে পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণা করুন।’

পরিবেশবিদ অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পাহাড় অপরাজনীতি আর অপেশাদার আমলাগিরির শিকার। পাহাড় রক্ষা কমিটি হয়েছে। কিন্তু সেটির নির্লিপ্ততায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এখানে পাহাড় শেষ করে বিন্না ঘাস লাগানো হয়। রক্ষাকারীরা ১৮টি পাহাড় কেটে নির্বাক থাকেন। তারা এই পরিবেশের অংশ না। আমরা পরিবেশের অংশীদার। আমলার মামলা দিয়ে নদী রক্ষা, পাহাড় রক্ষা হবে না। প্রধানমন্ত্রীকেই ঢাকায় বসে চট্টগ্রামের পাহাড়-নদী দেখতে হবে। না হলে চট্টগ্রামকে রক্ষা করা যাবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, ‘যারা পাহাড় দখল করেছেন তাদের তালিকা পাহাড় রক্ষা কমিটি করেছিল। কারও বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাহাড়ের বসতিতে নাগরিক সুবিধা পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। যে হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে, এক দশক পর কোনো পাহাড় অবশিষ্ট থাকবে না। পাহাড়বিহীন এক চট্টগ্রাম হবে। চট্টগ্রামের জনমত পাহাড় রক্ষার পক্ষে। সরকারকে বলব, এখনই পাহাড় রক্ষায় পদক্ষেপ নিন। চট্টগ্রামের মানুষকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবেন না।’

প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী লাগামহীন অর্থ আয়ের জন্য পরিবেশ ধ্বংস করছে। কয়েকদিন পরই বর্ষা। যদি পাহাড় ধসে কোনো ক্ষতি হয় তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে, সরকারকে নিতে হবে।’

পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নারী প্রগতি সংঘের এস এম এরশাদুল করিম, কারিতাস চট্টগ্রামের শ্যামল মজুমদার, ইকো’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এস এম আবু ইউসুফ সোহেল, যুব মৈত্রীর খোকন মিয়া, চেরাগী আড্ডার সংগঠক শৈবাল পারিয়াল এবং সাংবাদিক প্রীতম দাশ ও শফিকুল ইসলাম সাজীব।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

] টপ নিউজ পাহাড় কাটা পাহাড় রক্ষা কমিটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর