অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে বাংলাদেশের আইকনিক চ্যান্সেরি ভবন
১২ জুন ২০২১ ১০:৩৬
ঢাকা: অস্ট্রেলিয়ায় ক্যানবেরায় একটি আইকনিক চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এজন্য ‘বাংলাদেশ চ্যান্সরি ভবন শীর্ষক’ একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব জমিতে একটি আইকনিক চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ হবে। আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ হাই কমিশন, ক্যানবেরা।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে শক্তিশালী দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বাধীনতা অর্জনের পর অস্ট্রেলিয়া উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং সব দেশের মধ্যে চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। ফলে গত কয়েক যুগে দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী ও গভীরতর হয়েছে।
বাংলাদেশিদের জন্য অস্ট্রেলিয়া বরাবরই একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এই দেশটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ব্যবসা, বাণিজ্য, উন্নয়ন সহযোগিতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। গত এক যুগে সেখানে বাংলাদেশি ডায়াসপোরার আকার দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ ছয়গুণ বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি পোশাক, ওভেন, ফেব্রিকস, নিটওয়ার, হোম টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হিমায়িত মাছ, পাটজাত পণ্য প্রভৃতি রফতানি করা হয়।
ক্যানবেরায় বাংলাদেশের হাইকমিশন বর্তমানে ওমেলির আবাসিক এলাকায় একটি ভাড়া বাড়ি থেকে পরিচালিত হচ্ছে। প্লটটির আয়তন ১ হাজার ৯৯০ বর্গমিটার এবং অফিস ভবনের আয়তন ১ হাজার ৫৯০ বর্গমিটার। বর্তমান স্টাফদের তুলনায় এটি অপর্যাপ্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইকমিশনের কাজের পরিসর বেড়েছে। বর্তমানে সেখানে আটজন কূটনীতিক কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে কনস্যুলার সেকশনে কর্মরত দুজনের জন্য কোনো আলাদা কক্ষ বরাদ্দ নেই। তারা অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে উম্মুক্ত জায়গায় বসে কাজ করেন। অফিস ভাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য ভেন্যু ভাড়া বাবদ মিশনকে বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।
এছাড়া ভবিষ্যতে মিশনের জনবল আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশ আশা করে, অষ্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক সাহায্য ও বাণিজ্যের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসবে এবং ভবিষ্যতে দেশটি একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদারে রূপান্তরিত হবে। এ জন্য আগামী তিন চার যুগের চাহিদা পূরণের জন্য চ্যান্সারিতে কমপক্ষে ১০ জন কূটনৈতিক ১২ জন প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং পাঁচজন গাড়িচালকসহ অন্যান্য স্থানীয় স্টাফদের জন্য অফিস জায়গা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
অস্টেলিয়ার সরকার ১৯৮৫ সালে ক্যানবেরার কূটনৈতিক এলাকা ইয়ারালুমলাতে চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ১১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্লটটিতে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু না করায় ২০০৪ সালে জমিটি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ফেরত দিতে হয়। ২০১০ সালে বর্তমান সরকার আবার একটি প্লট বরাদ্দ পাওয়ার উদ্যোগ নেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ার সরকার ২০১১ সালে এই কূটনৈতিক এলাকায় ১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা মূল্যে ৭৪ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেয়। জমিটি বর্তমানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দখলে রয়েছে।
প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ক্যানবেরা সফর করে। সফর শেষে কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪৭২ বর্গমিটার চ্যান্সারি ও ৮০০ বর্গমিটার বাসভবন অর্থাৎ মোট ২ হাজার ২৭২ বর্গমিটার আয়তনের পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণের সুপারিশ করে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার যে প্লটটি ক্রয় করে তা আগের তুলনায় বেশ ছোট। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সেটব্যাক রুলস অনুযায়ী মাটির উপরিভাগে দুই তলার বেশি ভবন নির্মাণ অনুমোদিত নয় এবং মেক্সিমাম গ্রাউন্ড কভারেজ মোট আয়তনের ৩৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যান্সারি ভবনে মাটির উপরিভাগে ১ হাজার ৭৩৭ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে নির্মাণ সম্ভব।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্যানবেরাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিক ও কর্মচারীদের জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে একটি আইকনিক চ্যান্সারি ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এ প্রকল্প একটি দক্ষ ও সুসজ্জিত কুটনৈতিক সার্ভিস গঠনে অবদান রাখবে এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি উদীয়মান, আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে।’
সারবাংলা/জেজে/পিটিএম