জেল থেকে বেরিয়ে ‘হাত খালি’, ছিনতাইয়ে জড়িয়ে ধরা
১২ জুন ২০২১ ১৯:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে এক প্রকৌশলীর কাছ থেকে টাকা-মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার দু’জনের মধ্যে একজন হত্যা মামলায় এবং আরেকজন ছিনতাই মামলায় কয়েকমাস জেল খেটে মাত্র এক সপ্তাহ আগে বের হন। জেল থেকে বেরিয়ে আর্থিক অনটনে পড়েন। এর মধ্যে আবার জুয়া খেলার নেশায়ও জড়িয়ে পড়েন। টাকা যোগাতে ফের ছিনতাইয়ের পথই বেছে নেন তারা এবং গ্রেফতার হন।
শুক্রবার (১১ জুন) নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার দু’জন হলেন- সাদ্দাম হোসেন (৩০) ও মো. রনি (২৫)। উভয়ের বাসা নগরীর বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকায়। এদের মধ্যে সাদ্দামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং রনির বাড়ি কুমিল্লায়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, নগরীর টেরিবাজার আফিমের গলির মুখ থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ রনিকে গ্রেফতার করা হয়। ওই রিকশা ব্যবহার করে প্রকৌশলীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছিল তারা। রনির দেওয়া তথ্যানুযায়ী রাতে বাকলিয়ার তক্তারপুল এলাকায় সাদ্দামকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাদ্দাম একটি ডোবায় লাফিয়ে পড়ে। ময়লা-আবর্জনাময় ওই ডোবায় নেমে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।
রনিকে গ্রেফতারের সময় ব্যাটারিচালিত ওই রিকশায় তল্লাশি করে একটি ছোরা ও নগদ চার হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ। ওই টাকাই প্রকৌশলীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছিল। এছাড়া সাদ্দামের কাছ থেকে ছিনতাই করা মোবাইলটি পাওয়া যায়। এরপর সাদ্দামের দেওয়া তথ্যে তক্তারপুল এলাকায় তার ছোট ভাই আমজাদের বাসায় তল্লাশি করে খাটের নিচ থেকে ১টি দেশীয় এলজি ও ২ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয় বলে ওসি নেজাম জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে জনৈক প্রকৌশলী অরুপ রতন দাশ নগরীর ঘাটফরহাদবেগ হাজী হাকিম আলী সড়ক দিয়ে যাবার সময় ইভ টেইলার্স দোকানের সামনে ব্যাটারিচালিত রিকশায় এসে তিনজন তার পথরোধ করে। তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে একটি মোবাইল, দুটি এটিএম কার্ড, একটি আইডি কার্ড এবং নগর চার হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। কোরিয়ান ইপিজেডে কর্মরত অরুপ রতন এ ঘটনায় কোতোয়ালীলি থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইয়ূব উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, ছিনতাইয়ে সাদ্দাম ও রনির সঙ্গে মাইন উদ্দিন নামে আরেকজন ছিলেন। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। বাসা বাকলিয়ার তক্তারপুল এলাকায়। তবে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। সাদ্দামের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি, ডবলমুরিং ও হালিশহর থানায় ছিনতাইয়ের মামলা আছে। রনির বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় ২০১৮ সালের একটি হত্যা মামলা এবং কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইয়ের মামলা আছে। এছাড়া মাইন উদ্দিনের বিরুদ্ধেও কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইয়ের মামলা আছে।
‘জিজ্ঞাসাবাদে রনি ও সাদ্দাম জানিয়েছে- রনি প্রায় পাঁচ মাস আগে বাকলিয়া থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়। সাদ্দামকে আটমাস আগে আরেকটি ছিনতাই মামলায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। দু’জনই জানিয়েছে, তারা সপ্তাহখানেক আগে জেল থেকে জামিনে বের হয়েছে।’
জেল থেকে বেরিয়ে সাদ্দাম ও রনি আর্থিক অনটন ও জুয়ার নেশায় জড়ানোর তথ্য দেওয়ার কথাও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এসআই আইয়ূব বলেন, ‘সাদ্দাম জানায়, তার হাতে একদম টাকা ছিল না। এর মধ্যে আবার প্রতিরাতে তারা তক্তারপুল, বৌবাজার এলাকায় বিভিন্ন জুয়ার আসরে অংশ নেয়। সাদ্দাম, রনি ও মাইন তক্তারপুল কেন্দ্রিক ছিনতাইকারী গ্রুপের সদস্য। তখন সাদ্দাম রনি ও মাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রনি জানায়, তার হাতেও টাকাপয়সা নেয়। তারা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। রনির স্ত্রীর একটি ব্যাটারি রিকশা আছে। গ্যারেজ থেকে সেটি নিয়ে বের হয় এবং নির্জন রাস্তায় প্রকৌশলীকে একা পেয়ে ছিনতাই করে।’
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, গ্রেফতারের আগে সাদ্দাম, রনি ও মাইন একইভাবে কখনও সিএনজি অটোরিকশা, কখনও ব্যাটারি রিকশা নিয়ে ভোরের দিকে ছিনতাইয়ে বের হতো। তবে গাড়ি একটু দূরে রেখে তারা আলাদা-আলাদাভাবে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতো। নির্জন সড়কে একা কাউকে পেলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-মোবাইল কেড়ে নিত। তক্তারপুল কেন্দ্রিক তিন সদস্যের এই ছিনতাইকারী গ্রুপটি সাধারণত নগরীর সিনেমা প্যালেস, কাটাপাহাড়, নন্দনকানন এলাকায় ছিনতাই করতো।
শনিবার বিকেলে গ্রেফতার দু’জনকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত রিমান্ড আবেদনের শুনানি অপেক্ষমাণ রেখে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বলে ওসি নেজাম জানান।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম