‘ভিক্ষুক থেকে গ্যাং লিডার’
১৩ জুন ২০২১ ১৮:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও কিশোর অপরাধী চক্রের ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচত মো. শাহেদ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শৈশবে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনধারণ করা শাহেদ মাদকের কারবারের মধ্য দিয়ে এখন মোটামুটি বিত্তশালী। বিলাসী জীবনযাপন করেন। কিশোর গ্রুপকে ব্যবহার করে এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
রোববার (১৩ জুন) ভোরে নগরীর আগ্রাবাদে পানওয়ালা পাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাসাও ওই এলাকায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার মো. শাহেদ (২৫) নগরীর আগ্রাবাদের পানওয়ালা পাড়া এলাকায় ‘ভিখারি শাহেদ’ নামে পরিচিত। সে ডবলমুরিং থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি ১টি এলজি, ১ রাউন্ড কার্তুজ ও ৫০ টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতাকৃত শাহেদের অপরাধ জগতে উত্থানের বর্ণনা দিয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম শাহেদের। শৈশব কাটে খুবই আর্থিক সংকটের মধ্যে। আগ্রাবাদ এলাকায় সড়কে-ফুটপাতে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি করতে গিয়েই খুচরা মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। খুচরাভাবে মাদক পাচারে যুক্ত হয়। কিশোর বয়সের একপর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে মাদক পাচারেই পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ে।
বছর পাঁচেক ধরে শাহেদ ইয়াবা ব্যবসা করছে। মূলত কক্সবাজার থেকে আসা ইয়াবা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সে খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারীদের কাছে সরবরাহ করে। আগ্রাবাদ-পানওয়ালা পাড়া-বেপারি পাড়া এটাই তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে ১২ থেকে ১৪ জনের একটি কিশোর গ্রুপ তৈরি করেছে। স্থানীয়ভাবে এই গ্রুপের নাম ভিখারি বাহিনী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। কিশোর গ্রুপের সদস্যদের কাজ হচ্ছে— শাহেদের ক্রেতাদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দেওয়া ও ছিনতাই করা এবং শাহেদের বিরুদ্ধে কেউ এলাকায় দাঁড়াতে চাইলে তাকে শায়েস্তা করা।
দুইদিন আগে বেপারি পাড়া এলাকায় শাহেদের লেলিয়ে দেওয়া কিশোর অপরাধী চক্রের সদস্যরা দু’জনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে বলে ওসি জানান।
ইয়াবা ব্যবসার মধ্য দিয়ে শাহেদ এখন একজন ‘মোটামুটি বিত্তশালীতে’ পরিণত হয়েছেন জানিয়ে ওসি মহসীন বলেন, ‘একসময় ফুটপাতে-বস্তিতে থাকা শাহেদ এখন ভালমানের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তার ঘরে দুই স্ত্রী। নিজ বাসায় অসামাজিক কার্যকলাপের আসর বসায়। শাহেদের বান্ধবী পরিচয়ে একাধিক নারীও সেখানে থাকে। তাদের সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য লোকজনকে নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করে।’
‘শাহেদের গ্রুপের কিশোররা প্রত্যেকে বেতনধারী। এছাড়া শাহেদের কয়েকজন ব্যক্তিগত কর্মচারিও আছে যারা শৈশব-কৈশোরে তার ভিক্ষাবৃত্তির সহযোগী ছিল। তারা এখন শাহেদকে বস বলে সম্বোধন করে। ব্যক্তিগত কর্মচারীদের কাজ হচ্ছে পুলিশের ওপর নজর রাখা এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রুপের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। শাহেদের রিুদ্ধে আটটি মামলা আছে। ইতোমধ্যে পাঁচবার তিনি গ্রেফতার হয়েছেন’— বলেন ওসি মহসীন
শাহেদের গ্রুপের অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস
টপ নিউজ পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ভিক্ষুক থেকে গ্যাং লিডার মো. শাহেদ