Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাত্রলীগ কর্মী খুনের মামলায় ‘যুবলীগ নেতা’ গ্রেফতার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুন ২০২১ ১৮:৫১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে পাঁচমাস আগে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে খুনের ঘটনায় এক কথিত যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। গ্রেফতার মো. শাহাবুদ্দিন সাবু ওই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচমাস ধরে আত্মগোপনে থাকা সাবুকে রোববার (১৩ জুন) ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার হরিপুর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমীন এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নগরীর বাকলিয়া থানার দেওয়ান বাজার ভারপুকুর পাড় কেডিএস গলি এলাকায় শাহাবুদ্দিন সাবু’র বাসা। ওই এলাকায় গত ৮ জানুয়ারি বিকেলে ছাত্রলীগ কর্মী আশিকুর রহমান রোহিতকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে ১৫ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত আশিকুর রহমান রোহিত (২০) ওমরগনি এমইএস কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনায় রোহিতের বড় ভাই জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

১৭ জানুয়ারি বাকলিয়া থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দু’জন কথিত যুবলীগ নেতাকে ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন— মো. মহিউদ্দিন (২৯) ও সাইফুল ইসলাম বাবু (২০)। ওই সময় পুলিশ জানিয়েছিল, ছাত্রলীগ কর্মী খুনের পর তারা বেশভূষা পরিবর্তন করে ভারতে পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিল।

ওসি রুহুল আমীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর মহিউদ্দিন ও সাইফুলের মতো শাহাবুদ্দিন সাবুও আত্মগোপনে চলে যায় এবং বেশভূষা পরিবর্তন করে ফেলে। আমরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোলায় তার অবস্থান শনাক্ত করি। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। খুনের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে মহিউদ্দিন ও সাইফুলকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, এলাকায় ইট-বালু ও মাদকের ব্যবসা এবং ক্লাবের আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে আশিকুর রহমান রোহিতকে খুন করা হয়। আর মামলার এজাহারে মাদকবিরোধী পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ করা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, গ্রেফতার মহিউদ্দিন নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নগরীর চকবাজার থানার দেওয়ান বাজার-ডিসি রোডসহ আশপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত। শাহাবুদ্দিন সাবু ছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া কথিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী। টিনুকে গ্রেফতারের পর সাবু মহিউদ্দিন গ্রুপে যোগ দেয়। সাবুও নিজেকে এলাকায় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিত।

পুলিশ জানিয়েছিল, নগরীর দেওয়ান বাজার-ডিসি রোডসহ আশপাশের এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত মহিউদ্দিন ও সাবু। ওই এলাকার মা-মনি ক্লাব ব্যবহার করে তারা মাদকের ব্যবসা করত। ওই ক্লাবের সদস্য রোহিত তাদের ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ান। বিভিন্নসময় পুলিশকে খবর দিয়ে এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন রোহিত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রোহিতকে খুন করার জন্য মহিউদ্দিনকে প্রস্তাব দেয় সাবু ।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাতে মা-মনি ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুটবল খেলা পরবর্তী ‘পার্টির’ আয়োজন করা হয়। সেখানে মহিউদ্দিন-সাবু-আকবর-সাইফুলরা মিলে রোহিতকে খুন করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী সাবু নিজে ছুরি কিনে এনে সাইফুল ও আকবরকে দেয়। ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদুল আলমের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয় আকবর-সাইফুল ও রোহিত। ফেরার পথে আকবর ও সাইফুল পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিতকে অনুরোধ করে মোটর সাইকেলে করে সামনে এগিয়ে দেওয়ার জন্য।

রোহিতের মোটরসাইকেলের পেছনে করে দেওয়ান বাজার থেকে ভরাপুকুর পাড় এলাকায় যায়। সেখানে মোটর সাইকেলের গতি স্তিমিত করার সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে প্রথমে আকবর ছুরি দিয়ে রোহিতকে দুইবার আঘাত করে। রোহিত দ্রুত নেমে পালিয়ে যাবার সময় সাইফুল তাকে ধাওয়া দিয়ে ধরে আবারও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

ছাত্রলীগ কর্মী খুন যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর