Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষ করতে না পারলে রফতানি বাজার হারাতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২১ ০০:১৩

ঢাকা: উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষ করতে না পারলে রফতানির প্রধান বাজারগুলো হারাতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাকসিনেশন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারি সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা যোগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

রোববার (১২ জুন) বাজেট পরবর্তী এক আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা এসব পরামর্শ দেন। ভার্চুয়াল ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ও র‌্যাপিড চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

প্যালেন আলোচক এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর হারে ছাড়ের বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। তবে বাজেটটি এমন সময় হয়েছে যখন আমাদের সামনে করোনা সংকট থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রণোদনার পাশাপাশি ভ্যাকসিনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শেষ না হলে ক্রেতারা আসবে না। ভ্যাকসিন দিতে না পারলে আমাদের সঙ্গে ক্রেতা দেশের বিমান চলাচলও স্বাভাবিক থাকবে না। ফলে রফতানি বাজার হারানোর শঙ্কা রয়েছে’।

ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে বলে মন্তব্য করে বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিনেশনে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছি। এটি বাড়াতে হবে। ভ্যাকসিনেশনে পিছিয়ে থাকলে রফতানিতেও পিছিয়ে যেতে হবে’।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে অপর প্যানেলে আলোচক র‌্যাপিড চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শেষ না হলে বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। ফলে যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে’। প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ হাজার কোটি যথার্থ নয় জানিয়ে এ সংকট মোকাবিলায় থোক বরাদ্দের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকাও ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে সবাই কথা বলছেন। ভ্যাকসিন না নিলে, হার্ড ইমিউনিটি না হলে আমাদের পণ্যের ক্রেতারা এখানে আসবে না। এটা হলে আমরা কোথায় যাবো। আমার মনে হয়, এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে বলে আমি মনে করি’।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব বলে অনেকেই বলছেন। আমরা ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসাটাকে গুরুত্ব দিতে হবে—তা আমরা বুঝি। ব্যবসায়ীদের জন্য আমাদের দরজা খোলা রয়েছে’।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিবিএসের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা আমাদের পেশাদারদের স্বাধীনতা দিয়েছি। তাদের বলেছি, আপনারা যে তথ্য দিচ্ছেন তাতে আমরা যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ি। তথ্যের প্রাপ্তি, কোয়ালিটি এবং নিশ্চয়তা নিয়ে আমি কাজ করে যাব’।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেট এলডিসি গ্রাজুয়েশন উত্তরণ পরবর্তীতে সময়কে মাথায় রেখে করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই আমাদের ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কম। পেটেন্ট সুবিধা হারালে আমাদের জন্য অনেক কিছুতে চ্যালেঞ্জ আসবে’।

করোনা সংকট মোকাবেলায় এসএমই খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রস্তাব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

এ ব্যাপারে একমত প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘অনানুষ্ঠানিক খাতকে সুবিধা দিয়ে হারভেস্ট করার মাধ্যমে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাদের দুই টাকা আয় করার সুযোগ করে দিলে তারা আধা পয়সা আমাদের দেবে। তাদের ট্যাক্সের মধ্যে নিয়ে আসা যাবে’।

অনুষ্ঠানে বিজিএমই সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় ২০১৯-২০ সালে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। বিশেষ করে করেনার সমেয়ে তো বিনিয়োগ হয়নি। রফতানি কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর তা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রেমিট্যান্স এসেছে এবং সরকারের প্রজেক্টগুলো চলেছে—ফলে অর্থনীতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও ব্যক্তি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সেভাবে হয়নি’।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিড নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘পেনডেমিক চ্যালেঞ্জ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন উত্তরণ, এসডিজি গোল অর্জন এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সামনে রেখে বাজেট ঘোষিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এই লক্ষ্যগুলো ঠিক রেখে প্রণয়নের দরকার ছিল। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১ শতাংশের মতো। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটি ২ শতাংশ করার কথা বলা রয়েছে। ফলে বাজেটে এর বাস্তবায়ন নেই’।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঠিক তথ্য জোগাড় করা হয়নি। সরকারি পর্যায়ে কোনো গবেষণা হয়নি। কাদের সহায়তা দিতে হবে সে জায়গাটি পরিষ্কার হয়নি। ফলে বাজেটের আকার আরেকটু বাড়িয়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ানো যায়নি’।

‘রিফ্লেকশনস অন দ্যা বাজেট ২০২১-২২’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও গবেষণা সংস্থা রিসার্স পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) ।

সারাবাংলা/জিএস/আইই

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর