Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লিংক রোডের আশপাশের পাহাড় থেকে ৩৭০ বসতি উচ্ছেদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২১ ১৬:৫২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় চট্টগ্রামে পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি অপসারণ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ৩৭০টি পরিবারের বসতি উচ্ছেদ করে সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলোকে পাহাড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সোমবার (১৪ জুন) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের আশপাশের পাহাড়ে এ অভিযান চলে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় এরই মধ্যে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ছয় জন সহকারী কমিশনার তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে অভিযান চালান। তারা হলেন— চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইনামুল হাসান, হাটহাজারি সার্কেলের সহকারী কমিশনার শরীফ উল্যাহ, পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার এহসান মুরাদ, সীতাকুণ্ড সার্কেলের সহকারী কমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার মাসুমা জান্নাত। পরিবেশ অধিদফতর, নগর ও জেলা পুলিশ, র‌্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেন।

চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক সারাবাংলাকে বলেন, ‘টানা ছয় ঘণ্টা ধরে অভিযান চালানো হয়েছে। লিংক রোডের আশপাশে এবং ছিন্নমূল এলাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা থেকে ৩৭০টি ঘর আমরা উচ্ছেদ করেছি। অধিকাংশ ঘরই বাঁশের বেড়া ও টিন দিয়ে তৈরি। কয়েকটা ছিল সেমিপাকা। আবার শুধু টিনের ঘরও কিছু ছিল। কয়েকটি বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা ৩৭০টি পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে পাহাড় থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তারা সবাই পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ছিলেন। ভারি বর্ষণ শুরু হলে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় হতে পারত।’

ঘর উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সহকারী কমিশনার মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম একমাস ধরে চলবে।’ অভিযানের পর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের দেড় কিলোমিটার এলাকা অবৈধ বসতিমুক্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উচ্ছেদের সময় বৃষ্টি শুরু হলে বসতি হারানো লোকজন বিপাকে পড়েন। এসময় তারা কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, প্রায় ছয় কিলোমিটার বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ছোট-বড় ১৮টি পাহাড় কেটেছে। নগরীর উত্তর পাহাড়তলী মৌজা, হাটহাজারীর জালালাবাদ মৌজা এবং সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর মৌজায় এসব পাহাড় কাটা হয়েছে। ২০২০ সালে পাহাড় কাটার জন্য সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার আদেশ দেয় পরিবেশ অধিদফতর।

সিডিএ’র কেটে ফেলা ১৮টি পাহাড়ের মধ্যে অন্তত আটটি পাহাড়ে আছে কয়েকশ অবৈধ বসতি। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিডিএর কেটে ফেলা পাহাড়সহ নগরীতে এখন মোট ২৫টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে। অতিবৃষ্টিতে ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এসব পাহাড়ে। ঘটতে পারে প্রাণহানিও।

২০১৯ সালে সরকারিভাবে গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চট্টগ্রামে বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মোট ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে। এর মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়। বাকি সাতটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার। এসব সংস্থার মধ্যে আছে— রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগ, বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের তালিকায় ১৭টি  পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য চিহ্নিত করা হয়।

২০০৭ সালে পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে বড় ধরনের মর্মান্তিক বিপর্যয় ঘটে। ওই বছরের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবুবাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাপড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যায় শিশু-নারী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের ১২৭ জন।

এর আগেও পাহাড় ধসে ঘটেছে বেশকিছু প্রাণহানির ঘটনা। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ১২ জন, ২০১১ সালে একই পরিবারের পাঁচ জনসহ ১৭ জন, ২০১২ সালে ২৩ জনের পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

টপ নিউজ পাহাড় পাহাড় ধস বসতি উচ্ছেদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর