ঢাকা: জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে রিট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৪ জুন) গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখের নথি তলবের বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে বিষয়টার (খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ) কথা বলা হয়েছে, এটা তো ফেইক। এই ধরনের কোনো রিপোর্টই এভারকেয়ার করে নাই। যে তারিখটা বসিয়েছে তারা, এটা ফলসলি করা হয়েছে। যে কাগজটা তারা দিয়েছে যার উপরে আদালত একটা হুকুম দিয়েছে। এই হুকুমটা আমি জানি না বিং এ ল‘ইয়ার- এটা তারা কীভাবে দিলেন?”
তিনি বলেন, ‘দেশে তো রাজনীতি নেই। এখন উদ্দেশ্য তাদের একটাই- এই ধরনের (জন্মদিন) ইস্যুগুলো তুলে এনে জাতিকে বিভ্রান্ত করা, ডায়ভার্ট করার চেষ্টা করা, মূল সমস্যা থেকে জনগণকে ভুল দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর কিছুই না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব তারা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে একদলীয় শাসনে দেশ চলছে। এটা থেকে প্রমাণ হয়- জুডিশিয়ারি ইজ নট ফ্রি। জুডিশিয়ারির কিন্তু এটা আমলেই নেওয়া উচিত ছিলো না। দে শুড হেল বিন টোটালি রং।’
তিনি বলেন, ‘যে ভদ্রলোক করেছেন সে তো পারসোনালি সংক্ষুব্ধ না। আমি যতটুক আইন বুঝি যে, রিটটা তখনই হতে পারে ইফ এনি ওয়ান ইজ পারসোনালি এগ্রেসিভ। ব্যক্তিগতভাবে যদি সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নিজে সংক্ষুব্ধ হয় তখন হি কেন গো ফর এ রিট। এটা তা না। উনার জন্মদিনের ব্যাপারে কি আছে, না আছে এটা তো তাদের দায়িত্ব না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন- বহু লোকের কিন্তু জন্ম তারিখ আসল একটা আর সার্টিফিকেটে আরেকটা আছে। কারণ হচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের জেনারেশনের সময়ে তখন সঠিকভাবে বাবা-মা জন্ম তারিখ মনে রাখতে পারতেন না-জন্ম কবে হয়েছে, ডায়েরি-টায়েরি ম্যানটেইন করতেন না। ফলে দুই রকম হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এটা কোনো দিন ইস্যু হতে পারে না। দিজ ক্যান বি ইস্যু। হ্যাঁ, এখন পার্টিকুলার একটা ডেটে কেউ জন্ম নিতে পারবে না- এটা একটা ঘোষণা দিয়ে দিলে তো হয়ে যায়। ওইদিন হিসাব করে আপনাকে সন্তানের জন্মদানের কথা চিন্তা করতে হবে। এছাড়া তো উপায় নাই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যাবলী ইতোপূর্বে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত হয়েছে। কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের অধীনে মন্ত্রণালয়।’
তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কর্তৃত্ব হস্তান্তর করা হলে তা স্বাধীন নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নুন্যতম সম্ভাবনাটুকুক বিনষ্ট করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত, হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে তা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের নুন্যতম পরিসরকেও ধবংস করবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে চিরতরে ধবংস করবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শেকড় আছে বলেই বিএনপি টিকে আছে। এতো নির্যাতন, গুম-খুন, হাজার হাজার মামলার পরও বিএনপি টিকে আছে শুধু মাত্র এই দলের ডিপ রুট, মানুষের হৃদয়ের অনেক গভীর চলে গেছে বলে।’
সারাদেশের জেলায় স্কুল-বিদ্যালয়ের বিরাট বিরাট গেইট করার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, বিভিন্ন স্কুলে বড় বড় গেইট তৈরি করা হচ্ছে। এটা কোনো অগ্রাধিকার হতে পারে না। ওই টাকা দিয়ে যদি দুইটা ক্লাস ঘর করা গেলে বাচ্চারা ভালোভাবে পড়তে পারতো।’
‘গেইট তৈরি করে একটা আনপ্রোডাক্টিভ খাতে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। গতকালই আপনাদের টিভিতে দেখলাম যে, স্থানীয় সরকারের যে মন্ত্রণালয়ে শুরুতে দেওয়ালে কাঠের সমস্ত কাজ করে পুরো দেয়ালটা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এটা তো আনপ্রোডাক্টিভ। এই ব্যয়টা কেন? আনপ্রোডাক্টিভ খাতে এতো ব্যয় বেড়েছে যার মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে তাদের ট্যাক্সের টাকা থেকে।’
ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট এর বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার ফেইসবুক, টুইটার— এগুলোর রহস্য নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন। আমি অনেকবার বলেছি, আমার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। আমি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েছি, উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি। তারপরেও দেখি যে, আমার নামে বিভিন্ন একাউন্ট খোলা আছে।’
‘আমরা যতদূর জানি যে, সার্ভিলেন্সে এই সমস্ত মিডিয়ায় যখন গোয়েন্দারা ঢুকে পড়ে তখন তারা বিভিন্ন কিছু তৈরি করে। এটা শোনা কথা। কোথায় যাব বলেন? কোনো ফেইসবুক নেই। যেগুলো আমার নামে আছে, তা ফেইক। আমি নিজে একবার ব্বিৃতি দিয়ে বলেছি। আমি থানায় জিডি করেছি, আমি মামলা করেছি, উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে।’