হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে এনটিআরসিএ
১৫ জুন ২০২১ ১৮:০১
ঢাকা: বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আড়াই হাজার চাকরিপ্রার্থীকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে সংস্থাটির প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আড়াই হাজার চাকরি প্রার্থীর ১৯টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টের দেওয়া ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে এনটিআরসিএ।
চাকরি প্রার্থীদের ১৯টি আবেদনের মধ্যে গত রোববার (১৩ জুন) একটি আবেদনে শতাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে এনটিআরসিএ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার বিষয়টি মঙ্গলবার (১৫ জুন) সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন এনটিআরসিএর আইনজীবী কামরুজ্জামান ভূইয়া।
তিনি বলেন, ‘দুই হাজারের অধিক চাকরি প্রার্থীর ১৯টি আবেদনের পরিপেক্ষিতে তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে এনটিআরসিএ’র প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এনটিআরসিএ’র পক্ষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল (১৩ জুন) ১৯টি আবেদনের মধ্যে প্রথম পিটিশনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। প্রথম আবেদনে শতাধিক চাকরিপ্রার্থীর নাম রয়েছে।’
‘চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাকি ১৮টি আবেদনের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে এবং আগামী সপ্তাহে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে’— বলেন এই আইনজীবী।
এর আগে গত ৩১ মে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারী আড়াই হাজার চাকরিপ্রার্থীরকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে আদালত এনটিআরসিএ’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের নিয়োগের সুপারিশের রায় বাস্তবায়ন না করায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জানান, নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের নিয়োগের জন্য সুপারিশের রায় বাস্তবায়ন না করায় এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে প্রথমে দেড় হাজার শিক্ষক আবেদন করে। পরে আরও কয়েকশ শিক্ষক ওই আবেদনে যুক্ত হয়েছেন। পরে আড়াই আড়াই হাজার চাকরিপ্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
শুনানির ধারাবাহিকতায় ২৩ মে প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় দেড় হাজার চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশের জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সুপারিশের অগ্রগতির বিষয়ে হলফনামা আকারে জানাতে ৩১ মে পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে আদালত।
তার আগে গত ৬ মে প্রথম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীদের মধ্যে রিটকারীদের এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাত দিনের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে গত ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার নিবন্ধনধারীকে নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ’র জারি করা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত।
এছাড়া এনটিআরসিএ’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের নিয়োগের সুপারিশের রায় বাস্তবায়ন না করায় সংস্থাটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্ট।
নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত কিন্তু নিয়োগ বঞ্চিত কয়েকশ প্রার্থীর আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে, গত ৩০ মার্চ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) প্রবেশ পর্যায়ে মোট ৫৪ হাজার ৩০৪টি শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে ৯০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন সনদধারীদের জন্য একটি জাতীয় মেধাতালিকা করাসহ সাত দফা নির্দেশনা দেন। ওই রায়ে বলা হয়, এনটিআরসিএ নিয়োগের উদ্দেশ্যে যদি কোনো সুপারিশ করে, তবে তা ৬০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সনদধারীদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদ বহাল থাকবে। কিন্তু এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ এ রায় বাস্তবায়ন না করেই তৃতীয় দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার আবেদন করেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস
চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন হাইকোর্ট