Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ডাকাতকে এনআইডি: নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২১ ১৮:৪২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ‘রোহিঙ্গা ডাকাত’ নুর আলমকে জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি-স্মার্ট কার্ড) দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় বর্তমানে পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ তিনি মামলাটি দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

মামলায় নিহত নুর আলমকে এনআইডি দেওয়ার অভিযোগে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- চট্টগ্রাম নগরীর সাবেক পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ, চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাবেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোহাম্মদ শাহজামাল, পাঁচলাইশ নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রুফ রিডার উৎপল বড়ুয়া ও রন্তু বড়ুয়া।

এছাড়া নিহত নুর আলমকে জন্মসনদ ও জাতীয়তা সনদ দেওয়ার অভিযোগে দু’জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের চৌধুরী রাসেল, একই ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী ফরহাদ হোসাইন।

মামলার বাদি ও দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পর পুলিশ নুর আলমের কাছ থেকে এনআইডি কার্ড উদ্ধার করেছিল। তার কাছ থেকে স্মার্ট কার্ড পাওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন বিভাগীয় তদন্ত করে। সেখানে জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি সরবরাহের জন্য তথ্য দেওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করি। অনুসন্ধানে তাকে জন্ম সনদ, জাতীয়তা সনদ এবং এনআইডি দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পেয়ে মামলা করেছি।’

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এনআইডি পেতে নুর আলম তার ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের আমিন জুট মিল কলোনি উল্লেখ করে পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী ওই ঠিকানায় নুর আলমের অবস্থানের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে প্রত্যয়ন করেন।

পরবর্তীতে নুর আলম নিজেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ঠান্ডাছড়ি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা উল্লেখ করে আবেদন করেন। কিন্তু রাজানগর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান সামশুল আলমও ওই ঠিকানায় নুর আলম কখনও অবস্থান করেননি বলে প্রত্যয়ন করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে ‍নুর আলমকে চট্টগ্রাম নগরীর ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হলিশহর ওয়ার্ড থেকে জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া হয়। তৎকালীন কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের চৌধুরী রাসেলের প্রত্যয়নের ভিত্তিতে নুর আলমকে পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ভোটর তালিকায় নিবন্ধন করা হয় ও পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়।

সেসময় পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন আব্দুল লতিফ শেখ। নুর আলমকে ভোটার তালিকায় নিবন্ধন ও স্মার্ট কার্ডের জন্য তথ্য সার্ভারে আপলোড এবং পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী ও রাজানগর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান সামশুল আলমের প্রত্যয়ন আমলে নেননি। এমনকি তাদের দেওয়া তথ্য সংরক্ষণও করেননি বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা নুর আলমকে ভোটার তালিকাভুক্ত করে জাতীয় পরিচয় পত্র (স্মার্ট কার্ড) সরবরাহের জন্য দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের ‍দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জাদিমুরা ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ি আস্তানায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলম। ওইদিন বিকেলে তাকে টেকনাফের রঙ্গিখালী উলুচামারী পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছিল টেকনাফ থানা পুলিশ। স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল নুর আলম।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

টপ নিউজ দুদক নির্বাচন কর্মকর্তা রোহিঙ্গা স্মার্ট কার্ড

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর