রোহিঙ্গা নারীকে এনআইডি: ইসির ৪ কর্মচারীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
১৫ জুন ২০২১ ২০:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নারীকে বাংলাদেশি সাজিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) তৈরি করে দেওয়ার একটি অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের চার কর্মচারিসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপ সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন, নূর আহম্মদ, অস্থায়ী ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সাইফুদ্দীন, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্যসুন্দর দে, হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মীর্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবসার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম, জন্মসনদ প্রস্তুতকারী বেলাল উদ্দিন, মীর্জাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুছ সালাম, তার ছেলে আজিজুর রহমান, রোহিঙ্গা নারী লাকী ওরফে রমজান বেগম এবং তার স্বামী নজির আহম্মেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই রোহিঙ্গা নারী রমজান বিবি ওরফে লাকী মীর্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয়তা সনদ পান। পরে লাকী এই সনদ ও ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তার স্বামী রোহিঙ্গা নাগরিক নজির আহমদ ও তাদের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও জান্নাতুল বাকিয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন করেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে এই দুই মেয়েও একইভাবে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।
এজাহারে বলা হয়, রোহিঙ্গা হওয়ার পরও হাটহাজারী নির্বাচন কার্যালয় থেকে এনআইডি সার্ভারে লাকীর তথ্য আপলোড করা হয়েছিল। এই ভুয়া এনআইডি তৈরিতে জয়নাল আবেদীন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সত্যসুন্দর, সাইফুদ্দিন ও নূর আহম্মদ জড়িত ছিলেন।
একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে লাকীর স্বামী নজির আহমদ সৌদি আরব চলে যান। হাটহাজারীর আবদুছ ছালাম পিতা সেজে লাকীকে এনআইডি, জাতীয়তা সনদ পেতে সহায়তা করেন। লাকী নামে ছালামের একটি মেয়ে ছিলেন। তিনি মারা গেছেন আগে। ওই মৃত মেয়ের নাম ব্যবহার করে রমজান বিবিকে জাতীয়তা সনদ নিয়ে দেন তিনি।
১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।
এর আগে, ৮ জুন ঢাকা দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা নারী লাকী তার ভুয়া এনআইডি নিয়ে স্মার্ট কার্ড উত্তোলনের জন্য ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। লাকীর কথাবার্তায় সন্দেহ হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কিংবা লাকীর নামে এনআইডি ইস্যু করা হয়নি। এ ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন।
ঘটনার পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয় পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানা-পুলিশও তদন্ত শুরু করে। এতে দেখা যায়, অনেক রোহিঙ্গাই এভাবে ভুয়া এনআইডি করছেন।
২০১৯ সালে ওই ঘটনার পর নগরীর কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় জয়নালসহ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছিলেন। নির্বাচন কার্যালয়ের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ ব্যবহার করে জয়নাল সহযোগীদের নিয়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি করে দিতেন বলে অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচন অফিসের সার্ভার ব্যবহার করে লাকীর এনআইডি পাবার জন্য যেসব তথ্য প্রয়োজন, সেগুলো আপলোড করা হয়েছিল। সেটি পুরোপুরি অবৈধ। নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নূর আহম্মদ ফরম সরবরাহ করেছেন। জয়নাল আবেদীন নিজ বাসায় বসে ডাটা তৈরি করে এবং হাটাহাজরির ডাটা এন্ট্রি অপারেটর সাইফুদ্দিন সেগুলো আপলোড করেন। এটা আরও অনুসন্ধান হবে। যারা যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত, পরবর্তীতে তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও