রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৬ জুন ২০২১ ১৬:৪০
ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল আলোচনায় এই আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) নিউইয়র্কে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ যৌথভাবে ভার্চুয়াল এই ইভেন্টটির আয়োজন করে। কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক স্থায়ী মিশন এবং ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ এই অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল।
এতে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভলকান বজকির তার সম্প্রতি কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এ সময় আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছি। সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধান করার কথা বলেছি। বিশেষ করে তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা আলোচনা অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ইভেন্টটির সমৃদ্ধ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদূন হাদি সিনির লইয়োগ্লু, জাতিসংঘের জেনোসাইড প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা মিজ অ্যালিস ওয়াইরিমু নেডিরিটু, মিয়ামারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যানড্রিউজ, জাতিসংঘে নিযুক্ত সৌদি আরবের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ও উইমেন পিস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক মিজ ওয়াই ওয়াই নু। প্যানেল আলোচনা পর্বটির সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট এর নির্বাহী পরিচালক ড. সায়মন অ্যাডাম।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও মানবীয় উদারতার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই নীতি-আদর্শ ও উদারতাই আমাদের সহিংসতার শিকার ও বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দানে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের সম্পদ ও স্থানের তীব্র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি আবাসন সুবিধার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গদের জন্য সৃষ্ট নতুন এই আবাসন ব্যবস্থা জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীরা যথাযথভাবে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং এখানে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বদা সচল রাখতে যে সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে তা স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি এ বিষয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তাদের দায়বদ্ধতা পালন করবে। এছাড়াও মিয়ানমার সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে— যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারে। এজন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আঞ্চলিক সংস্থা ও দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্র, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনসহ বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী ভার্চুয়াল এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে ওইদিন বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) ভলকান বজকির’র সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন। এ সময় আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯’র ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ সেশন আহ্বান করার জন্য পিজিএ’কে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় কোভিড-১৯’র ভ্যাকসিনকে গ্লোবাল পাবলিক গুড হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক্ষেত্রে সকলের অধিকার নিশ্চিতে তার অফিসকে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানান বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
সারাবাংলা/জেআইএল/এনএস
জাতিসংঘের জরুরি পদক্ষেপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন রোহিঙ্গা সংকট