বাঁধের দাবিতে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে সংসদে এমপি শাহজাদা
১৬ জুন ২০২১ ১৮:০৮
ঢাকা: এলাকার মানুষের মনের কথা সংসদে তুলে ধরতে ভিন্নরূপে দেখা গেল পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদাকে। তিনি ‘আর কোনো দাবি নাই, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
এস এম শাহজাদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যখন নির্বাচনি এলাকায় যাই, এলাকার মানুষ আমার কাছে এ রকম দাবি নিয়ে হাজির হয়। আমি তো এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ নই। আমি মানুষের কথা সংসদে তুলে ধরতেই তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি।’
বুধবার (১৬ জুন) সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাঁধ নির্মাণের দাবি তুলে ধরেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাজেট বক্তৃতায় শাহজাদা বলেন, ‘সম্প্রতি ইয়াসের প্রভাবে আমার নির্বাচনী এলাকায় নদীর চারপাশের জমি নষ্ট হয়ে গেছে। চাষিরা যে মাছ চাষ করেছিল তাদের মাছগুলো সাগরে চলে গেছে। আমরা ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সবার জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। আমার একটি উপজেলায় ৩৬ লাখ আর এক উপজেলায় সরকার ২১ লাখ মানুষের জরুরি সাহায্য দিয়েছে। এগুলো সব দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে রোষানল এসেছে বেড়িবাঁধ নিয়ে। আমার ওখানে আসলে ত্রাণ চাই না। আমার ওখানে লোকজন গিয়েছিল তারা আমাদের বলেছিল আর কোনো দাবি নাই ত্রাণ চাই না বাঁধ চাই। আমি ওই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ নই। এ ধরনের প্ল্যাকার্ড এবং এ ধরনের লেখা নিয়ে সেদিন লোকজন উপস্থিত হয়েছে। আমি তাদের পক্ষ থেকে এটি পরে দেখাচ্ছি।’
শাহজাদা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাজীবন চ্যালেঞ্জ নিয়েই সফল হয়েছেন। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা তার নামের সঙ্গে এখন পরিপূরক। তার সরকারের এই বাজেট অবশ্যই সফল হবে এবং বাজেট ব্যবসা বান্ধব হওয়ায় আশা করি দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশী বিনিয়োগ করবে যা বেকারদেরকে চাকরির সুযোগ করে দেবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ ও মেইডইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ায় অর্থ মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে সিরামিক শিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী সেক্টর। দেশি-বিদেশি প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ৬৮টি সিরামিক টেবিলওয়্যার, টাইলস্ ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ৫ লক্ষাধিক লোকের। ৫০টিরও বেশি দেশে রফতাসি করে বছরে ৪ শতাধিক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং স্থানীয় বাজারে ৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি বিকল্প পণ্য বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু বাজেটে সিরামিক শিল্প প্রতিরক্ষণের কোনো প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি। উপরন্তু বিদেশি টাইলস্ আমদানিকে উৎসাহিত করে স্থানীয় সিরামিক শিল্পের জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত আরোপ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই যেখানে টিকে থাকতে হিমসিম খাচ্ছি, সেখানে এ পদক্ষেপ দেশীয় ও শিল্প সংকটে পড়বে বলে আশংকা করছি। এটি সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে যা কাম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে গাড়ি আমদানিতে কিছু গাড়িতে সম্পূরক শুল্ক বিভিন্ন স্তরে হ্রাস করেছে। যা রাস্তা থেকে অবৈধ দুর্ঘটনা প্রবল যানবাহন বন্ধ করতে সহায়তা করবে। কিন্তু এ বিষয়ে যেই গাড়িগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি ভূমিকা রাখে যেমন ২০০০ সিসির ভ্যান ক্যাটাগরির গাড়িগুলো যার ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান এগুলোর শুল্ক কমানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পণ্য পরিবহনেও ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানগুলো গ্রামীণ পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য আরও সাশ্রয়ী করা প্রয়োজন। এই জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখল করে আছে বিভিন্ন নামে ট্রাকটরগুলো যা রাস্তার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।’
এমপি শাহজাদা বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর, সফলতাও প্রচুর কিন্তু কিছু ঘটনা, যদিও তা বিচ্ছিন্ন ও কম তারপরেও তা আমাদেরকে কিছু একটা করার জন্য তাগিদ দেয়। মাদকসেবীরা মন্ত্রীর ফোনও ছিনতাই করে। কোভিড মহামারির কারণে আমাদের সন্তানেরা গৃহবন্দি, চিত্তবিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আজ ব্যাহত হওয়ার কারণে মাদক আজ আরও বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি করে। মাদক এখন এমন আকার ধারণ করেছে, যা সহজেই বহনযোগ্য। তাই এটিকে প্রতিরোধ করার জন্য যেমনি সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন তেমনি কিছু বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি মনে করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনুকরণীয়। এই যে করোনা’র মতো ভয়াবহ মহামারি তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যথথোপযুক্ত নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। আমার নির্বাচনী এলাকার চার দিকেই নদী বেষ্টিত। একদিকে তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরঙ্গ ও আগুনমুখা। নদীর নাম শুনলেই এর অবস্থা অনুমান করা যায়। ইয়াসের সময় পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি ও বাতাসের চাপে এই নদীগুলো তার ভয়াবহতা নিয়ে স্ব-রূপ প্রকাশ করেছে। আমার এলাকার মধ্যে প্রচুর চর আছে। যার মধ্যে চরকাজল, চরবিশ্বাস, চরবোরহান, চরহাদী ও চর ভুতাম উল্লেখযোগ্য। এই চর ভুতামে প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদে বীজ বর্ধন খামার আছে এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে এই চরে গিয়ে এটি উদ্বোধন করেছিলেন। এই চরটিও ভেঙে অর্ধেক হয়ে গেছে। আমাদের এই চরগুলোর মধ্যে বেশির ভাগগুলোতেই বেড়িবাধঁ নেই। যাও আছে তাও দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারের অভাবে বহু জায়গায় বিলীন হয়ে গেছে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে