ইতিহাদে হয়রানির ক্ষতিপূরণ দিতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
১৬ জুন ২০২১ ১৯:৪৯
ঢাকা: বাংলাদেশি দুই নাগরিককে হয়রানির দায়ে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুন) সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। গত বছরের ৮ অক্টোবর হাইকোর্ট ওই রায় দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশি দুজন নাগরিককে ২০১১ সালের ২৮ জুন আবুধাবি এয়ারপোর্টে হয়রানি/নির্যাতন/আটকের ঘটনায় ইতিহাদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করলে ওই বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘটনা তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
রুল শুনানির ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৮ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে বাংলাদেশি যাত্রী তানজিন বৃষ্টি ও নাহিদ সুলতানা যুথীকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
আইনজীবী মোরসেদ জানান, ১৯২ পৃষ্ঠার ওই রায়ে আদালত ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
এক. বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংকটজনিত কারণে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের অবস্থা বিবেচনায় আবেদনকারী এবং তার মা প্রত্যেককে মাত্র ১ (এক) কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ইতিহাদ এয়ারওয়েজের বাংলাদেশ প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুই. এ রায় ও আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী মাস থেকে ২০টি (বিশ) সমান মাসিক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণের টাকা ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিন. নারী যাত্রীদের সঙ্গে অধিকতর সতর্কতায় সম্মানজনক আচরণ করার জন্য ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা আকাশপথে চলাচল করেন। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বাংলাদেশি রফতানিকারকদের পণ্য প্রতিনিয়তই আকাশপথে পরিবহন করা হয়। তাই বাংলাদেশি প্রবাসী সব কর্মজীবী ও রফতানিকারদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং তাদের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশের সব দূতাবাসে এ মামলার রায় অনুসারে সভা, সেমিনার আয়োজন করে বিমান সংস্থার দায়বদ্ধতার বিষয়ে তাদের ওয়াকিবহাল করতে হবে। যাতে আকাশপথে যাতায়াতের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ তারা আদায় করতে সক্ষম হন।
পাঁচ. আকাশপথে যাত্রী ও যাত্রীর লাগেজ, পণ্যের মালিকের অধিকতর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য International Civil Aviation Organization (ICAO) কে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বর্তমান ICAO এর কার্যক্রম যতটা যাত্রীবান্ধব, তার চেয়ে বেশি পরিবহন সংস্থাবান্ধব। যেহেতু বর্তমান বিশ্বে যাত্রী ও পণ্য দ্রুত পরিবহনের অন্যতম তথা প্রধান মাধ্যম আকাশপথ, সেহেতু আকাশ পরিবহন সংস্থা এবং যাত্রী সাধারণের মধ্যেকার দায় দায়িত্ব আরও বেশি সহজ-সরল, সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। বিশেষ করে সাধারণ যাত্রী ও সাধারণ পণ্য মালিককে সুরক্ষা দেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশাল বিমান সংস্থার সামনে সাধারণ যাত্রী নিতান্তই অসহায়।
সেহেতু ICAO এর প্রধান উদ্দেশ্য এবং কাজ হবে সাধারণ যাত্রীরা যেন তার অধিকার আদায়ে কিংবা তার ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোনো প্রকার বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন না হয় সেটি দেখা। আকাশ পরিবহন কার্যক্রম পরিবহন সংস্থার লাভের জন্য নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ভ্রমণকারীদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম