করোনার নমুনা পরীক্ষার জালিয়াতির দায়ে আরেকটি বেসরকারি ল্যাব বন্ধ
১৭ জুন ২০২১ ০০:৩৯
ঢাকা: বিদেশগামী যাত্রীদের নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীতে আরও একটি ল্যাবের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত এই বেসরকারি ল্যাবটির নাম প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিটের সরবরাহের চাইতে বেশি নমুনা পরীক্ষার প্রমাণ, মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজিস্টসহ দক্ষ জনবল না থাকা, পাসপোর্ট যাচাই ছাড়া ডাটা এন্ট্রি করা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে যথাসময়ে তথ্য না দেওয়ার অভিযোগে এই ল্যাবের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে।
বুধবার (১৬ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা’র সই করা এক নির্দেশনায় ল্যাবটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালিবাগ মোড়ের হোসাফ শপিং কমপ্লেক্সের চতুর্থ ফ্লোরে অবস্থিত প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি ২০২০ সালে বেসরকারিভাবে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পায়। ল্যাবটিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকলেও এখানে নমুনা পরীক্ষা হয়ে আসছিল দীর্ঘ সময় থেকে। এছাড়াও অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট নিয়োগ ছাড়াই ল্যাবটিতে কাজ করা হচ্ছিল।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ল্যাবটিতে ১৬ জুন পর্যন্ত সাত হাজার ২০০টি পিসিআর পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট কেনা হয়েছে। তবে এই ল্যাব থেকে ১৬ হাজার ১৭৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছে ল্যাব কর্তৃপক্ষ। ল্যাবটির পক্ষ থেকে ২২ মে পরবর্তী সময়ে কোনো নমুনা পরীক্ষার তথ্য দেওয়া হয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতরে। পূর্বেও একই ধরনের অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র।
সম্প্রতি ৯ জুন বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য নতুনভাবে নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ সেটিকেও অবজ্ঞা করে কাজ চালিয়ে যায়। একই সঙ্গে যথাযথভাবে পাসপোর্ট যাচাই করা ছাড়াই ডাটা এন্ট্রি দেওয়া হতো ল্যাবটির পক্ষ থেকে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি দল ১৬ জুন ল্যাবটিতে সরেজমিনে তদন্ত করতে যায়। অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে অভিযোগের সত্যতা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাবটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা’র পক্ষ থেকে প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
এর আগে ৯ জুন বিদেশগামী যাত্রীদের নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে চারটি ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। টাকার বিনিময়ে করোনা পজিটিভ ব্যক্তিকে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় নানা অনিয়মের কারণে এই চারটি ল্যাবে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের কাছে এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে করোনার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৯ জুন চিঠি দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ল্যাব চারটি হচ্ছে— সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, স্টিমজ হেলথ কেয়ার, আল জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের মিরপুর শাখা। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে চারটি ল্যাবকে আলাদাভাবে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত স্টিমজ হেলথ কেয়ার (বিডি), বিজয় স্মরণীর সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার ও মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস মিরপুর শাখায় বিদেশগামী যাত্রীদের ভুয়া করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেওয়া হতো টাকার বিনিময়ে। এছাড়াও মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনুমোদন নেওয়ারও অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদফতর তদন্ত করে সত্য পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/একে