ঢাকার ৬০টি নমুনায় ৬৮ শতাংশ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেল্টা’
১৭ জুন ২০২১ ২৩:২৫
ঢাকা: রাজধানীতে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত ৬০ জনের নমুনার সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এটি দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নামেও পরিচিত। এছাড়াও ২২ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে বেটা বা দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুনের প্রথম সপ্তাহ সময়সীমায় এই সিকোয়েন্সিং করা হয়।
দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বোঝার জন্য চালানো নিয়মিত সার্ভিল্যান্সের অংশ হিসেবে এই সিকোয়েন্সিং করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি)। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ম্যানেজার তারিফুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি বোঝার জন্য নিয়মিতভাবে সার্ভিল্যান্স করা হয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সিকোয়েন্সিং করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ সময়সীমায় ৬০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে।’
তারিফ হাসান বলেন, “রাজধানী ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ৬০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশ নমুনায় ভারতীয় ধরন বলে পরিচিত ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ২২ শতাংশ নমুনায় দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট বলে পরিচিত ‘বেটা’ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।”
তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই ডাটা এখনও জিআইএসএইড (গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা) ডাটাবেজে সাবমিট করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন তারিফ হাসান। তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুতই তা প্রকাশ করা হবে।’
এর আগে এপ্রিলে দেশে আইসিডিডিআর,বি’র আরেকটি সার্ভিল্যান্সের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় করোনাভাইরাসের সব ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় প্রাধান্য বিস্তার করছে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি। আর মার্চের চতুর্থ সপ্তাহে প্রায় ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রেই দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
আইসিডিডিআর,বি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই তথ্য-উপাত্ত থেকে এটি স্পষ্ট যে, করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলোর উপস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে, যা এই ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানটির জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণকারী দলের নেতৃত্ব দেন আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগ্রহ করা নমুনাগুলোর মাঝে অধিকাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক। আমরা যে গবেষণা করেছি তাতে দেখা গেছে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য ছিল। পরে তৃতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের পরিবর্তে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেশি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ ভাইরাস, বিশেষ করে এম-আরএনএ ভাইরাস নিজেকে টিকিয়ে রাখতে অনেক বেশি মিউটেশন করে। এটা প্রাকৃতিকভাবেই হয়ে থাকে। আর তাই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক বিষয়। দেখা গেল, এখন একটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কথা বলছি, আবার কয়েকদিন পরে দেখা যাবে নতুন আরেক ভ্যারিয়েন্ট।’ তাই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের তাগিদ দেন ড. মুস্তাফিজ।
তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ভাবতে হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিয়ে। নতুন যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক, তার বিরুদ্ধে বাঁচার উপায় একটাই— মাস্ক পরে থাকতে হবে, হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।’
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম
আইসিডিডিআর ঢাকার ৬০টি নমুনা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেল্টা’ সিকোয়েন্সিং