করোনা সংক্রমণের হার টানা ২ সপ্তাহ ১০ শতাংশের বেশি
১৮ জুন ২০২১ ১২:৪৫
এপ্রিলে চূড়া স্পর্শ করার পর করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ কিছুটা হলেও ছিল কমতির দিকে। এর মধ্যে এপ্রিলের শেষ থেকে জুনের শুরুর একমাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে মাত্র চার দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের কম। তবে ওই জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফের চিত্র বদলে যেতে থাকে। ৪ জুন থেকে শুরু করে ১৭ জুন পর্যন্ত টানা দুই সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে শেষ ১০ দিনেই সংক্রমণের হার ১২ শতাংশের বেশি রয়েছে।
শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার ছাড়িয়েছে ১৬ শতাংশও। গত ২০ এপ্রিলের পর এই সময়ে এসেই প্রথম এত বেশি সংক্রমণের হার পাওয়া গেছে। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে জুন মাসের অর্ধেকের পর দুই দিন পেরোলেও এই ১৭ দিনের সংক্রমণই মে মাসের ৩১ দিনের সংক্রমণকে স্পর্শ করার কাছাকাছি চলে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে আগের ২৪ ঘণ্টার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। তা থেকেই দেখা গেছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৫ শতাংশের বেশি। আর এর আগের দিন এই হার ছিল আরও বেশি— ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। শেষ ৫৮ দিনের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার। আর এ নিয়ে দেশে টানা দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিন ধরে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন-
- ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু বেড়ে ৬৩
- একটিও নমুনা পরীক্ষা হয়নি শরীয়তপুরে, ১৩ জেলায় ৫০-এর কম
- আজও শনাক্ত সাড়ে ৩ হাজারের বেশি, সংক্রমণের হার ১৫% ছাড়িয়ে
এপ্রিল মাসের সংক্রমণের চিত্র
গত এপ্রিল মাসে মাত্র একদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। বাকি ২৯ দিনই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ সংক্রমণের হারও দেখা গেছে এই মাসে।
সার্বিকভাবে এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। এই মাসে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭টি। সে হিসাবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
মে মাসের সংক্রমণের চিত্র
মে মাস শুরু হলে সংক্রমণ ও সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে থাকে। মে মাসের ৩১ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মাসে কেবল তিন দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। বাকি দিনগুলোতে সংক্রমণের হার ছিল ৬ থেকে ৯ শতাংশের ঘরে।
গোটা মে মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মাসে নমুনা পরীক্ষা এপ্রিলের তুলনায় কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এ মাসে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৪১ হাজার ৪০৮টি নমুনায়। সে হিসাবে এই মাসে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসের সংক্রমণের হারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
জুনে বাড়ছে সংক্রমণ
মে মাসে সংক্রমণ ও সংক্রমণের হারের এই নিম্নগতির চিত্রটি আবার বদলে গেছে জুন মাসে। এই মাসের প্রথম ১৭ দিনেই নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ১৪৪টি। আর এসব নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪৭টি। অথচ গোটা মে মাসেই মোট সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৪১ হাজার ৪০৮টি। সে হিসাবে ১৮ জুনের হিসাব এলেই হয়তো জুনের সংক্রমণ ছাড়িয়ে যাবে মে মাসের মোট সংক্রমণকে।
এদিকে, ৪ জুনের ৪ পর থেকে টানা সংক্রমণের হার পাওয়া গেছে ১০ শতাংশের বেশি। ১৭ দিনের হিসাব বলছে, এই সময়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যেটি মে মাসের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেশি।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সংক্রমণ ও সংক্রমণের হার
এই জুনের শেষ দুই সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ১৪ দিনের প্রতিদিনই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে দুই দিন করে সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশ, ১১ শতাংশ ও ১৩ শতাংশের বেশি। আর তিন দিন করে সংক্রমণের হার পাওয়া গেছে ১২ ও ১৪ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া একদিন সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশ ও একদিন ১৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
এদিকে, এই দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার আগের সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি। তাতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৪১৫টি নমুনায়। সে হিসাবে এই সময়ে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আর এর পরের সপ্তাহ, অর্থাৎ সবশেষ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪১৯টি। এসব নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২০ হাজার ৬৯২টি। সে হিসাবে এই সপ্তাহে সংক্রমণের হার ছিল ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
দুই সপ্তাহের তথ্য তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেষ সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। কিন্তু একই সময়ে সংক্রমণের শনাক্তের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণের হারও বেড়েছে প্রায় তিন পয়েন্ট।
স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে, জনসমাগম এড়িয়ে না চললে এবং সঠিকভাবে মাস্ক না পরলে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এপ্রিলে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করলেও কিছু শিথিলতা ছিল বিধিনিষেধের মধ্যেও। খোলা ছিল দোকানপাট, চলেছে গণপরিবহন। বিধিনিষেধ সংক্রান্ত সবশেষ নির্দেশনায় অফিসও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও আগে থেকেই প্রায় অফিসই খোলা ছিল পুরোদমে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর পর বাংলাদেশেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণাতেও দেখা যাচ্ছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুনের প্রথম সপ্তাহ সময়সীমায় ঢাকায় করোনা সংক্রমিত ৬০ জনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত কিছুদিনে সীমান্ত এলাকাতেও দেখা গেছে সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সব মিলিয়েই সংক্রমণ বাড়ছে। আগের মতোই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, জনসমাগম না এড়াতে পারলে এবং মাস্ক না পরলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়।
সারাবাংলা/টিআর