জুনের ১৮ দিনেই ছাড়িয়ে গেল মে মাসের মোট আক্রান্তের সংখ্যা
১৮ জুন ২০২১ ২২:২৯
ঢাকা: দেশে মে মাসে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৮ জনের মাঝে। তবে জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনে ৪৪ হাজার ৪৩১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ মে মাসের চেয়ে তিন হাজার ৩০২ জন বেশি সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে জুনের প্রথম ১৮ দিনেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া স্বাস্থ্য বুলেটিনের তথ্যানুযায়ী, দেশে জুনের প্রথম ১৮ দিনের সংক্রমণ শনাক্তের হারও ছাড়িয়ে গেছে পুরো মে মাসের সংক্রমণ হারের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে মে মাসে কমে এসেছিল। তবে এই সময়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেছে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অনেকেই এসেছে সংক্রমিত হয়ে। যাদের মাঝে পাওয়া গেছে দেশটিতে পাওয়া যাওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। একই সঙ্গে দেশে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সচেতন করার জন্য কোনো সমন্বিত উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। একইসঙ্গে দেশে সমন্বয়হীনতার কারণে যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আর সবকিছু মিলিয়ে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। এখনো যদি কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া না হয় তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
শুক্রবার (১৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বুলেটিন অনুযায়ী দেশে ২২ হাজার ৮৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার ৮৮৩ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ দিন মারা গেছেন ৫৪ জন। দেশে এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭১ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ হাজার ৩৯৯ জন। একই সময়ে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৪২১ জন।
দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর পর চলতি বছরের ১৩ মার্চ পর্যন্ত পার হয়ে গেছে ৬৬ সপ্তাহ ৬ দিন। সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার পর্যালোচনা করলে এখানেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। চলতি বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ০৩ শতাংশ হারে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের জুন মাসে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের পরিসংখ্যান। এ মাসে ৯৮ হাজার ৩৩০ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২০ সালের মে মাসে ৩৯ হাজার ৪৮৬ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
চলতি বছরের মে মাসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ মাসে চার লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪১ হাজার ৪০৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে এক হাজার ১৬৯ জন মারা যায় যা মৃত্যুহার বিবেচনায় দুই দশমিক ৮২ শতাংশ।
এর আগে দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় এপ্রিল মাসে। এ মাসে এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ মাসে দুই হাজার ৪০৪ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়।
দেশে সংক্রমণের সাপ্তাহিক সংক্রমণের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় চলতি সপ্তাহের প্রথম ছয় দিনেই সংক্রমণ শনাক্তের হার ছাড়িয়ে গেছে ১৫ শতাংশের বেশি। সর্বশেষ ৫৯ তম সপ্তাহে (১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল) ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ হারে ২৭ হাজার ১৪৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর ৭ সপ্তাহ পরে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৫ শতাংশ ছাড়াল। অর্থাৎ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের ৬৭ তম সপ্তাহের প্রথম ৬ দিনে সংক্রমণ শনাক্তের হার হয়েছে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে মে মাসের শেষ দিকে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। এ সময় সেখানের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে তা অন্যান্য জেলাতেও প্রভাব ফেলে। পরে দেখা যায় সীমান্ত এলাকা ছাড়াও সংক্রমণ বাড়তে থাকে। মূলত স্বাস্থ্য বিধি বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরার অভ্যাস ধরে রাখতে না পারলে সংক্রমণ বাড়বেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকে উপসর্গ দেখা দিলেও নমুনা পরীক্ষা করায় না। এটি একটা সমস্যা। দেখা গেল তিনি সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন কিন্তু জানেনই না তার পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর তখন সংক্রমণ বাড়ে। একই সঙ্গে দেখা যায় সামাজিকভাবেও অনেকে সচেতন না। সবকিছু মিলিয়ে আসলে জুনে সেগুলোর প্রভাব পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারে তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা থাকে। তবে যদি সেটি না করা হয় তখন সামনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ মূল বিষয় একটাই- ভ্যারিয়েন্ট বা অন্য কিছু না ভেবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবেই। এর কোনো বিকল্প নেই।’
মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীনতার কারণে সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে মনে করেন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে প্রবণতা আমরা দেখছি তাতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রয়োজন নেই— এমনিতেই সংক্রমণের হার বেড়ে যাবে। কারণ যে ভ্যারিয়েন্টই হোক তাতে যদি মাস্ক না পরে তবে সংক্রমণ এমনিই ছড়াবে। আর তাই এতে আলাদাভাবে কোনো ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব না বলে সামগ্রিকভাবে সংক্রমণ বাড়ার কারণ খুঁজতে হবে। মানুষ কেনো মাস্ক পরছে না তা বোঝার চেষ্টা যেমন করতে হবে তেমনি তাকে বুঝিয়ে মাস্ক পরার ব্যবস্থাও করতে হবে। আইন প্রয়োগ করে কঠোর হয়ে হয়তবা করা সম্ভব। কিন্তু যদি কেউ না বুঝে মাস্কের গুরুত্ব, তাকে কী আর বেশি সময়ের জন্য জোর করিয়ে মাস্ক পরানো যাবে?’
তিনি বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মানুষের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করা। নইলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কমানো কঠিন। মে মাসে হয়তো সংক্রমণ শনাক্তের হারে কিছুটা নিম্মমুখী ধারা দেখা যাচ্ছে; কিন্তু সেটাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো উপায় নেই- এমনটি আমরা আগেই বলেছিলাম। করোনাভাইরাসের সমস্যাটি এমন যে, প্রতিরোধ করেই একে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না পারলে পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। এখনো যদি আমরা এই বার্তাটি না বুঝি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’
সরকারের বিধিনিষেধ অব্যাহতভাবে জারি রাখার বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনার অভাব রয়েছে বলে মনে করে ডা. নজরুল। তিনি বলেন, ‘সরকার বিধিনিষেধের সময়কাল বাড়িয়েছে, বাড়াচ্ছে— এমন প্রচারণা শুনছি। কিন্তু এটা কেন ও কী কারণে দেওয়া হচ্ছে তা জনগণকে বোঝাতে হবে। এছাড়া বিধিনিষেধ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু মাস্ক পরার কোনো নির্দেশনা কী এগুলোতে বলা হচ্ছে? কে নিশ্চিত করবে মাস্ক পরার বিষয়টি? এমন কোনো নির্দেশনা বা পরিকল্পনা কী আছে? আমার ধারণা, জনগণের কাছে এই ধারণাটি এখনও স্পষ্ট নয়। আর তাই সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো মানা হচ্ছে না। জনগণের কাছে নির্দেশনা স্পষ্ট করতে হবে। তারা মানছে কি না, সেটি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। যারা মানছে না, তারাও যেন মানতে বাধ্য হয়, এমন ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সময় দেখেছে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। এটি কেন হচ্ছে তা কী বের করা হয়েছে? এর জন্য কিন্তু দায়ী অনেক কিছুই। বাণিজ্যিকভাবে ভারত থেকে অনেক ট্রাক আমাদের দেশে পণ্য নিয়ে আসে। সেগুলো আসার পর আমাদের দেশের শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে সেই পণ্য পাঠানোর কাজ করে থাকে। সেখানে কিন্তু খুব একটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করে না তারা। এখন দেশে বিধিনিষেধ চলাকালে তো এগুলো বন্ধ রাখা হয়নি। কিন্তু বলা হচ্ছে, লকডাউন সারাদেশে। আদৌ কি তা? সবকিছু নিয়ে হেলাফেলা করতে করতে আজ পর্যন্ত আমরা একটা কাঠামোই দাঁড় করাতে পারিনি। আর এগুলো হয়েছে সমন্বয়হীনতার কারণেই।’
তবে ডা. নজরুলও বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘সবাই যদি মাস্ক পরে, সবাই যদি অন্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো ঠিকমতো মেনে চলে, তাহলেই কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব ৯০ শতাংশের বেশি। ফলে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে, না ধুয়ে চোখে-নাকে-মুখে হাত দেওয়া যাবে না, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। সবাই এগুলো অনুসরণ করলে পরিস্থিতি এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই দেখছি বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের দোষ দিচ্ছে সংক্রমণের হার বাড়ার জন্য। এমনটা বলা কিন্তু ঠিক না। কারণ তখনই এটা বলা যেত যখন দেশের সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতো। দেশে যুক্তরাজ্য, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়ার জন্য অবশ্য এখনই নতুন ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন গবেষণা। তার আগ পর্যন্ত তাই অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ও সেটা মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটর করতে হবে।’
সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে বিভিন্ন রকমের ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মানুষের অবাধ চলাচলের কারণে বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ভ্যারিয়েন্টের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানলে তো ভ্যারিয়েন্ট কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। আর তাই মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা আজকের এ অবস্থা তৈরি করেছে। আর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে মূলত সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার জন্য। আর এমন সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কারণটা হলো সমন্বয়হীনতা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনও পর্যাপ্ত পরিমানে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। আবার সচেতনতার অভাবে অনেকে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। অনেক জেলা শহরেও এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়া যায়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা চালু করা যেতে পারে। এসব সিদ্ধান্ত নিতে যত দেরি হবে তত বিপদের আশঙ্কা বাড়ে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের এখানে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানা বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। একটা প্রজ্ঞাপন দিয়ে দিলেই তো আর হয় না। সেটি মানা হচ্ছে কিনা তাও তো পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
দেশে ভ্যাকসিন বিতরণ সংক্রান্ত কোর কমিটির সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে-এর কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ভ্যাকসিনই কিন্তু একমাত্র উপায় নয়। ভ্যাকসিন হচ্ছে অনেকগুলোর মাঝে একটিমাত্র উপায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমরা দেখেছি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে অনেকেই রিল্যাক্স হয়ে যাচ্ছিলেন। এটি বিপজ্জনক। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও কিছুটা সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়বেই।’
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকতে হলে সবাইকে অবশ্যই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে কোনো কিছু খাওয়ার আগে ন্যূনতম ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। একই সঙ্গে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ বাড়ছে কারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তবে অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া জনসমাগমে না যাওয়াই ভালো। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি মাস্ক পরা নিয়ে একধরণের উদাসীনতা কাজ করছে প্রায় অনেক জায়গাতেই। এগুলো বিপদজনক হতে পারে যেকোনো সময়েই। আর তাই স্বাস্থ্য বিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।’
দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মোকাবিলা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে আমরা যদি শতকরা হারে বিবেচনা করি তবে দেখা যায় ঢাকা শহরে গড়ে এখনও সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। তবে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব সেটি নির্ভর করবে বিদ্যমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে, সে অনুপাতে রোগীর সংখ্যার ওপর। আমাদের যা সক্ষমতা রয়েছে, এ মুহূর্তে কোভিড ডেডিকেটেড ৭ হাজার শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে যদি রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার হয়ে যায়, তাহলেই সেটি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ শনাক্তের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতেই হবে আর এর কোনো বিকল্প পদ্ধতি এখন পর্যন্ত নেই।’
সারাবাংলা/এসবি/একে