Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এএসআই হত্যা: মালিকের ‘সংকেত পেয়ে’ পিষে দেয় চালক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ জুন ২০২১ ১৮:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে চলন্ত মাইক্রোবাস দিয়ে পিষে পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শককে হত্যার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মদবোঝাই মাইক্রোবাসটিকে মোটরসাইকেল নিয়ে আগে-পিছে পাহারা দিয়ে সেটির মালিক ও তার লোকজন নিয়ে যাচ্ছিল। চালকের প্রতি মালিকের নির্দেশ ছিল, মাইক্রোবাসের সামনে কোনো বাধা এলে কিংবা কোনো পুলিশ সদস্য থামার সংকেত দিলে তাকে আঘাত করেই যেন গাড়ি এগিয়ে যায়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এএসআই হত্যাকাণ্ডকে মালিকের নির্দেশ অনুযায়ী এবং পরিকল্পিত বলছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৮ জুন) রাতে কক্সবাজারে পালানোর পথে শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ।

গ্রেফতার তিনজন হলেন— মাইক্রোবাসের চালক মো. বেলাল (৩৪), মো. রাশেদ (২৬) এবং তার বাবা সামশুল আলম (৬০)।

পুলিশ জানিয়েছে, মাইক্রোবাসের চালক উত্তম বিশ্বাস ধর্মান্তরিত হয়ে বেলাল নাম ধারণ করেন। তার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার ধোরলা গ্রামে। গ্রেফতার সামশুল মাইক্রোবাসের মালিক মো. জাহাঙ্গীরের বাবা এবং রাশেদ ছোট ভাই। তাদের বাড়ি একই উপজেলার আহল্লা দরবার শরীফ এলাকায়।

গত ১১ জুন সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার মেহেরাজখান ঘাটা পেট্রোল পাম্পের সামনে বোয়ালখালী-পটিয়া অভিমুখী মাইক্রোবাসটিকে থামার সংকেত দিয়েছিলেন এএসআই কাজী মো. সালাহউদ্দিন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি সেই সংকেত অমান্য করে চলন্ত অবস্থায় তাকে ধাক্কা দেয় এবং টেনেহিঁচড়ে-পিষে নিয়ে যায় সামনে। গুরুতর আহত এএসআই সালাহউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চান্দগাঁও থানার মেহেরাজখান ঘাটা এশিয়া ফ্যান ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের গেটের সামনে রাস্তার ওপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে। এর ভেতরে ৭৩০ লিটার মদ পাওয়া যায়। পুলিশ হত্যাকাণ্ড ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেছে।

গ্রেফতার তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘চোলাই মদবাহী মাইক্রোবাসটিকে আগে-পিছে এস্কর্ট দিচ্ছিল দু’টি মোটরসাইকেল। এর মধ্যে সামনের মোটরসাইকেলে ছিলেন মাইক্রোবাসের মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ম্যানেজার বাবু। পেছনের মোটরসাইকেলে ছিলেন জাহাঙ্গীরের পার্টনার রাশেদ ও ফারুক। চালক বেলাল জাহাঙ্গীরের সংকেত অনুসরণ করছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

‘সাধারণত. কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আশপাশের সড়কে অর্থাৎ শহরের প্রবেশমুখে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির চেকপোস্টে নিয়মিত যানবাহন তল্লাশি করা হয়। তাদের ধারণা ছিল, কাপ্তাই রাস্তার মাথায় তারা অবশ্যই চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে পড়বেন। এজন্য চালকের প্রতি জাহাঙ্গীরের নির্দেশনা ছিল, পুলিশ থামার সংকেত দেওয়ার পরও সে যেন গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যায়। এতে প্রয়োজনে কোনো পুলিশ সদস্য হতাহত বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও চালক গাড়ি থামাতে পারবে না। ধরা পড়ে কোনো মামলা হলেও সেটা সামলাতে হবে চালককে,’— বলেন রাজেশ বড়ুয়া।

এএসআই সালাহউদ্দিন গাড়ি থামার সংকেত দিলে সামনের মোটরসাইকেলে থাকা জাহাঙ্গীরের সংকেত মেনেই চালক বেলাল তাকে পিষে দেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু পিষে দেওয়ার পর সামনের মোটরসাইকেল নিয়ে জাহাঙ্গীর দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় বেলাল রাস্তায় মাইক্রোবাস ফেলে পালিয়ে যান বলেও তিনি জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরের মোটরসাইকেলটি নগরীতে একটি গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। চালক বেলাল হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর শফি উদ্দিনের আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। মাদক মামলায় বেলালসহ তিন জনকে একই আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল।

পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বাধীন একটি মাদক সিন্ডিকেট রাঙামাটি-কাপ্তাই থেকে মদ সংগ্রহ করে তার বাড়ি আহল্লা দরবার শরীফ এলাকায় নিয়ে যেত। সেখান থেকে তার বাবা ও ভাই মিলে বোয়ালখালী-পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত। বেলাল ও রাশেদের বিরুদ্ধে আগেও রাউজান থানায় মামলা আছে। পলাতক জাহাঙ্গীর ও ঘটনায় জড়িত তার আরও তিন সহযোগীকে আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

এএসআই সালাহউদ্দিন গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা গ্রেফতার ৩

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর