অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে মা-মেয়ের দ্বন্দ্ব থেকেই কদমতলী হত্যাকাণ্ড
১৯ জুন ২০২১ ২৩:৫৫
ঢাকা: অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে মা-মেয়ের দ্বন্দ্ব, স্বামীর সঙ্গে ছোটবোনের পরকীয়া সন্দেহ ও সম্পর্কের অবনতি এবং আগের স্বামীকে হত্যার মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতেই মেহজাবিন পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে ধারণা পুলিশের। আর সেই পরিকল্পনা থেকেই কদমতলী হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি মেহজাবিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাকি এ কথা স্বীকারও করেছেন।
পুলিশ বলছে, শুক্রবার (১৮ জুন) রাত নয়টার দিকে মেহজাবিন মুন তার স্বামী শফিকুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিয়াকে নিয়ে কদমতলীর মুরাদপুরে বাবার বাসায় যায়। রাতেই বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে বিষ জাতীয় কিছু মিশিয়ে দেয় মেহজাবিন। এতে মা মৌসুমী ইসলাম (৪০), বাবা মাসুদ রানা (৫০) ও বোন জান্নাতুলের (২০) মৃত্যু হয়। যাদের মরদেহ পুলিশ শনিবার দুপুরে উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তার আগের ঘরের মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিয়াকে (৬) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইফতেখার ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর শনিবার (১৯ জুন) সকালে ঘটনাস্থল থেকে ফোন দেয় মেহজাবিন। ফোন দিয়ে সে জানায়, পুলিশ দ্রুত না গেলে তার স্বামী এবং সন্তানকেও মেরে ফেলা হবে। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে।’
কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেহজাবিন ৯৯৯-এ কল করে জানায়, তার বাবা মা ও বোনকে বিষ জাতীয় কিছু খাওয়ানোর পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করেছেন। পুলিশ দ্রুত না গেলে তার স্বামী-সন্তানকেও মেরে ফেলবেন। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা মৃতদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। পরে অভিযুক্ত ওই নারীকেও আটক করা হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মৃতদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, নিহত মৌসুমী ইসলাম উচ্চবিত্তদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে অর্থ আদায় করতেন। এমনকি তার মেয়ে মেহজাবিন মুনেরও বিএনপির এক নেতার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এই বিষয়গুলো নিয়ে মা-মেয়ের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হতো। এর রেশ ধরে মুন পরিকল্পিতভাবে সবাইকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মেহজাবিন মুনের মা মৌসুমী সাবেক এক বিএনপি নেতার পিএস হত্যা মামলার আসামি। মুনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-মেয়ের বিষয়গুলো অনেকটাই জানতেন। কিন্তু কিছু বলতে পারতেন না।
মেহজাবিনের চাচাতো বোন শিলা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেহজাবিন তার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দেওয়ার কথা প্রায়ই বলতো। সে তার আগের স্বামীকেও খুন করে। সেই মামলায় মেহজাবিনসহ তার নিহত বাবা-মা ও বোনের জেল হয়েছিল। পাঁচ বছর জেল খেটে তারা জামিনে ছাড়া পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল স্বামী সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এসেই ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। তার জেরেই হয়তো তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’
এছাড়া প্রতিবেশী মনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জায়গা-সম্পত্তি নিয়েও পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিল মেহজাবিনের। সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য বাবা-মাকে প্রায়ই চাপ দিতেন। এ নিয়ে এর আগে শালিস বৈঠকও হয়েছে।’
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শফিকুল সারাবাংলাকে জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত নয়টার দিকে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মুন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেন। বাসার সবাই সেগুলো খায়। কিন্তু পরে কী হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট মনে নেই।
শফিকুল আরও জানান, মুনের সঙ্গে গত তিন মাস ধরে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এমনকি নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গেও তার ভালো ছিল না।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম