Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আরও ৫৩ হাজার পরিবারের গৃহহীন থাকার কষ্ট ঘুচানোর দিন আজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ জুন ২০২১ ০৮:০০

ঢাকা: দেশের কোন মানুষ গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা এখন আর নিছক রাজনৈতিক স্লোগান নয়, নয় আশ্বাসের ফুলঝুড়ি। কারণ এরই মধ্যে গৃহহীন তো বটেই, একেবারে সহায়-সম্বলহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণার প্রতিফলন পেয়েছেন হাতেনাতে। এবারে আরও ৫৩ হাজার ৪৩৪ পরিবারের আশ্রয়হীনতার কষ্ট মোচনের দিন এসেছে।

আজ রোববার (২০ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অগ্রাধিকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে দেশের আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার নিজেদের মালিকানায় মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাবে।

বিজ্ঞাপন

মুজিববর্ষ সামন রেখেই মূলত গৃহহীনদের জন্য জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঘোষণা দেন, সরকার সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে। প্রধানমন্ত্রীরসেই ঘোষণা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শুরু হয় প্রতিটি অঞ্চলে গৃহহীনদের তালিকা তৈরির কাজ। তালিকা তৈরি শেষে শুরু হয় বাড়ি নির্মাণ। এর প্রথম পর্যায়ের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর আজ দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারের তরফ থেকে গৃহহীনদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে জমির দলিল, ঘরের চাবি। এর মাধ্যমে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সোয়া লাখ গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মুজিববর্ষের উপহারের ঘর।

আরও পড়ুন- ঘর দিতে পারলাম, মুজিববর্ষে এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব: প্রধানমন্ত্রী

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুজিববর্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ৫৩ হাজার ৪৩৪টি বাড়ি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৮০টি বাড়ি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ হাজার ৫১২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ হাজার ৫৬২টি, রংপুর বিভাগে ১২ হাজার ৩৯১টি, রাজশাহীতে ৭ হাজার ১৭২টি, খুলনা বিভাগে ৩ হাজার ৯১১টি, বরিশাল বিভাগে ৭ হাজার ৬২৭টি এবং সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৯৭৯টি বাড়ি দেওয়া হবে ভূমিহীন ও গৃগহীনদের।

বিজ্ঞাপন

কেবল বাসস্থান নয়, পুনর্বাসন হতে যাওয়া পরিবারগুলোর জন্য সুপেয় পানি ও বিদ্যুৎ, চলাচলের জন্য সড়ক, সময় কাটানোর জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থাও থাকছে। এর বাইরে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতেও থাকছে উদ্যোগ। শুধু তাই নয়, পরিবেশের সুরক্ষা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের গাছও লাগানো হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প থেকে মূলত এসব ঘর নির্মাণের জন্য অর্থায়ন করা হয়েছে। আর প্রকল্পটির সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। প্রথম ধাপের ৭০ হাজার ও আজকের দ্বিতীয় ধাপের ৫৩ হাজার পরিবারের পর এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আরও এক লাখ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখানেই শেষ নয়, আগামী বছর আরও সোয়া লাখ পরিবারের আশ্রয় নিশ্চিত করবে সরকার— রয়েছে এমন পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সংসদে বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভিক্ষুক, বেদে ও হিজরা জনগোষ্ঠীকেও আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। খাস জমি না পাওয়া গেলে সরকার প্রয়োজনে জমি কিনে এসব পরিবারকে পুনর্বাসন করবে।

দেশের গৃহহীন মানুষের জন্য নিজস্ব আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পরই জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলাগুলো ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। ওই এলাকা পরিদর্শন করে উদ্বাস্তু মানুষগুলোর জন্য তখনই তিনি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন। ওই বছরই সরকার গ্রহণ করে ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প।

সেই প্রকল্পের আওতায় তখন থেকেই গৃহহীন মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করে আসছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের ‍খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তু ছয়শ পরিবারের পুনর্বাসনও হয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আরও বলেছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। সারাদেশে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই’ কথাটি চিরতরে বিলুপ্ত করা হবে। এ জন্য সরকার বদ্ধপরিকর।

সারাবাংলা/টিআর

আশ্রয়ণ প্রকল্প আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ আশ্রয়ণ-২ গৃহহীনদের ঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর