Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাবা তুমি হারালে কোথায়?

মামুনুর রশিদ
২০ জুন ২০২১ ১২:০৩

ঢাকা: আজ জুন মাসের তৃতীয় রোববার, বিশ্ব বাবা দিবস। প্রতিবছর এই দিবস আসছে আসবে কিন্তু অচিন দেশে ফিরে যাওয়া বাবারা আর আসবে না। আজকের দিনে সবাই পরম শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্মরণ করবে নিজের বাবাকে।

কেউ বাবাকে নিয়ে কেক কাটবে, কেউ ফুল, নতুন পোশাক বা প্রিয় লেখকের বই উপহার দেবে। কেউবা তার বাবার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দ–আড্ডা দেবে। অথচ বুকভরা বিষণ্নতা আজ আমাকে অশ্রুসিক্ত করছে। যার জন্য দিবস সেই বাবাই আজ নেই। এ দিবস আমাকে বেদনা ছাড়া আর কী দেবে?

বাবা থাকতে হারানোর এমন করুণ স্বর হৃদয়ে বাজেনি। হৃদয়ও কোনোদিন বুঝতে পারেনি বাবা হারনোর যন্ত্রণা। তার চলে যাওয়া চিরনির্বাসনের যাতনা দিয়ে গেছে। রেখে গেছে শোণিতের দাগ ও তীব্র বেদনা। এ বেদনা বোঝা যায়, বোঝানো যায় না। ছোটবেলা থেকেই একটি সন্তানের চোখে বাবা যে রঙিন স্বপ্নের পৃথিবী এঁকে দেন, তার বাস্তবায়নেই বাবাদের জীবনে শত চেষ্টা। বিসর্জনের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়ে নিজের সব স্বাদ, আহ্লাদ শুধু সন্তানের স্বপ্ন চাওয়াকে আলিঙ্গন করেই যে তৃপ্তি সুখের হাসি, তা শুধু বাবাদের মুখেই মানায়। জীবনসংগ্রামের এক অকুতোভয় সৈনিক তিনি, লাঞ্ছনা–বঞ্চনা কিংবা দুর্ব্যবহার জীবন-জীবিকা চক্করে ঘটে চলেছে হরহামেশাই, তবু সব ভুলে দিন শেষে মুচকি হেসে সন্তানদের বুকে জড়িয়ে ধরছিলেন শুধু বাবাই।

বাবা তোমাকে নিয়ে আমি যখন এই গল্প লিখতে বসেছি, তখন তুমি অন্ধকার কবরে ঘুমিয়ে আছো, তোমায় নিয়ে আমার লেখার মতো কত কত বিষয় আছে, সেটা হয়তো তুমি নিজেও জানো না। ছোটকাল থেকেই যখন তুমি আমাকে তোমার পরম মমতায় আদর করে তোমার সাথে ঘুমানোর ব্যাবস্থা করতে সেটি আমি আজও ভুলতে পারি না। তোমার হাত ধরেই আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি, তুমি ছিলে স্কুলশিক্ষক। প্রতিদিন তোমার সাথে করেই আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে নিয়ে আসতে। তুমি ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেই আমাকে পড়া দিতে, পড়া নিতে। আমাকে নিয়ে তোমার অনেক স্বপ্ন ছিল সেটা তুমি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বহুবার বলেছো। আমার পড়ালেখায় কখনোই যেন বিন্দু পরিমাণও ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়ে তুমি ছিলে অনেক বেশি সিরিয়াস।

সন্তানের সাফল্য একজন বাবাকে কত বেশি সুখি করে, সেদিন কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। বাবা তুমি আমাকে শিখিয়েছো দারিদ্র্যকে টপকে যেতে, শিখিয়েছো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। বাবার শিক্ষা হলো সুশিক্ষায় সমাজকে ও পরিবারকে আলোকিত করা। বাবার শিক্ষা হলো, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সবাইকে সমান চোখে দেখা। তিনি শিখিয়েছেন, লোকের কটু কথার ভয়ে নিজের সুন্দর কাজগুলো বন্ধ না করতে।

বাবা ছিলে আমাদের পরিবারের বটবৃক্ষের মতো। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও পরিবারের সবাইকে আগলে রেখেছিলে। সন্তানদের জন্য, পরিবারের জন্য তোমার সে কি পরম মায়া ছিল। কোনো সন্তান অপরাধ করলেও তুমি তা মার্জনা করে সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে। তুমি ছিলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। হুমায়ূন আহমেদ তাই তো যথার্থই বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে খারাপ মানুষ অনেক আছে, কিন্তু কোনো খারাপ বাবা নেই।’

জীবননদীর স্রোত অবিরাম বইছে। তুমি এপার ছেড়ে চলে গেছো আমাদেরকে রেখে গেছো ঝড়-ঝাপটা পোহাতে। ঝড়-ঝাপটার বেগ ও গতি দূরান্তর। সীমাহীন এ দূরত্বের বিক্রমী ক্ষমতা অজানা। আমরা এই অজানা গতির বেগ ও আঘাত নীরবেই সহ্য করে যাচ্ছি। শোকে শোকে ফুরিয়ে যাচ্ছি। অতি শোক আমাদেরকে পিষে পিষে খাচ্ছে। তুমি আজ কতদিন নেই। প্রায়ই ভীষণ ইচ্ছে হয়, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে আসি। তোমাকে এক নজর দেখি। দেখে পরানটা জুড়াই। কত কী রঙের চেহারা দেখি আর দেখব। তোমার সেই চান মুখ দেখার সাধ কোনো কিছুতেই মিটে না। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বুঝি এ জন্যই প্রিয়জনের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়েও বেশি দেখি যখন দেখি না।’

সত্যিকার অর্থে বাবা শুধু একজন মানুষ নন, স্রেফ একটি সম্পর্কের নাম নয়। বাবার মধ্যে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো বয়সী সন্তানের হৃদয়ে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার এক অনুভব জাগে। বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়। যিনি তাঁর সন্তানকে জীবনের সব উত্তাপ থেকে সামলে রাখেন। পৃথিবীতে যাঁর বাবা নেই সে-ই বোঝে বাবার ভালোবাসা তার জন্য কতটা প্রয়োজন। মাঝিবিহীন নৌকা যেমন চালানো যায় না, তেমনি বাবা ছাড়া নিজের জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া অনেক কষ্টকর। বাবাকে হারানো অনেকেই আজ পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো মনে করে নীরবে চোখ মুছবে। যাদের বাবা ইহলোক ত্যাগ করেছেন, তারা আজ আমার মতো বলবে, ‘বাবা কত দিন, কত দিন দেখি না তোমায়…’

পৃথিবীর সব বাবাই ভালো থাকুন; আর যাঁরা পরলোকগত হয়েছেন, সেই সব বাবা শান্তিতে থাকুন—এই হোক আজকের বাবা দিবসের প্রত্যাশা।

সারাবাংলা/একে

টপ নিউজ বাবা দিবস শৈশব


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর