টানা ৭ দিন শনাক্ত ৩ হাজারের বেশি, মৃত্যুও ৫০-এর ওপরে
২০ জুন ২০২১ ১৯:৫৬
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত এপ্রিলে চূড়া স্পর্শ করার পর কিছুটা হলেও কমতির দিকে ছিল। তবে মধ্য জুনে এসে দেশের করোনা পরিস্থিতি ফের অবনতির দিকে যাচ্ছে। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে টানা সাত দিন ধরে তিন হাজারেরও বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। এছাড়া একই সময় মৃত্যুও রয়েছে ৫০-এর উপরে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ১৪ জুন থেকে টানা সাতদিন ধরে শনাক্তের হার তিন হাজারে ওপরে এবং মৃত্যু ৫০-এর বেশি রয়েছে। ১৪ জুন ৩০৫০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৫৪ জনের। ওইদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এই হার দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত থাকে। অর্থ্যাৎ ১৫ জুনও ১৪ শতাংশের ওপর নমুনা শনাক্ত হয়। এদিন সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩১৯ জন। আর মারা যায় ৫০ জন। ১৬ জুন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন ৩ হাজার ৯৫৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। আর মৃত্যুবরণ করেন ৬০ জন।
১৭ জুন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কমে ১৫ শতাংশে নেমে আসে। এদিনও ৩ হাজার ৮৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয় এবং মারা যান ৬৩ জন। এছাড়া ১৮ জুন ৩ হাজার ৮৮৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আর মৃত্যু হয় ৫৪ জনের। এদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৮ শতাংশ অতিক্রম করে এবং পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৯ জুনও সেটা অব্যাহত থাকে। সেদিন ৩ হাজার ৫৭ জনের নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয় আর মৃত্যুবরণ করেন ৬৭ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গত ৫২ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড দেখল দেশ। এদিন করোনা আক্রান্ত ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৪১। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কিছুটা কমে ১৬ শতাংশে অবস্থান করে।
এপ্রিলে করোনা সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করা পর মে থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। মে মাস শুরু হলে সংক্রমণ ও সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে থাকে। মে মাসের ৩১ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মাসে কেবল তিন দিন সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। বাকি দিনগুলোতে সংক্রমণ ৬ থেকে ৯ শতাংশের ঘরে অবস্থান করে। তবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ফের চিত্র বদলে যেতে থাকে। ১৪ জুন থেকে শুরু করে ২০ জুন পর্যন্ত টানা এক সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণের হার রয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে, জনসমাগম এড়িয়ে না চললে এবং সঠিকভাবে মাস্ক না পরলে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এপ্রিলে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করলেও কিছু শিথিলতা ছিল বিধিনিষেধের মধ্যেও। খোলা ছিল দোকানপাট, চলেছে গণপরিবহন। বিধিনিষেধ সংক্রান্ত সবশেষ নির্দেশনায় অফিসও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যদিও আগে থেকেই প্রায় অফিসই খোলা ছিল পুরোদমে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর পর বাংলাদেশেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণাতেও দেখা যাচ্ছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে জুনের প্রথম সপ্তাহ সময়সীমায় ঢাকায় করোনা সংক্রমিত ৬০ জনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৬৮ শতাংশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তথা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত কিছুদিনে সীমান্ত এলাকাতেও দেখা গেছে সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সব মিলিয়েই সংক্রমণ বাড়ছে।
আগের মতোই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, জনসমাগম না এড়াতে পারলে এবং মাস্ক না পরলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়।
সারাবাংলা/পিটিএম