রাজস্ব ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টম হাউসের নানা উদ্যোগ
২২ জুন ২০২১ ০০:৩৫
বেনাপোল (যশোর): স্থলপথে দেশের সর্ববৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব ফাঁকি রোধে বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা পাঁচ হাজার ৬৯৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর ও রেলপথে আমদানি পণ্যের রাজস্ব আদায়, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, ডিজিটালি অটোমেশন, চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি রোধ, নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি না নেওয়া পণ্যের নিলাম, ব্যবহারের উপযোগিতা হারানো কিংবা ক্ষতিকর রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস ইত্যাদি ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণা, জাল জালিয়াতি ও শুল্কফাঁকি রোধে অসাধু আমদানিকারক ও সি অ্যান্ড এফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কাস্টম হাউস। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে ১৯টি লাইসেন্স এবং চূড়ান্ত বাতিল করা হয়েছে ৩টি।
এদিকে গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রথম মে মাস অর্থাৎ ১১ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় দুই হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় তিন হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে এক হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বেশি, বৃদ্ধির এই হার শতকরা ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, গত দেড় বছর করোনার কারণে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। তবে করোনা মহামারি মধ্যেও সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যবসাবান্ধব নীতির পাশাপাশি কাস্টম হাউসের কমিশনারের সঠিক নেতৃত্বের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর কাস্টম হাউসের অভ্যন্তরীণ নানা উদ্যোগ, কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি বছরের পর বছর বন্দরে পড়ে থাকা পণ্যের দ্রুত নিলাম, পঁচা-ব্যবহার অনুপযোগী পণ্যের নিলাম এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য ধ্বংসের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য এসেছে।
কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম একজন দক্ষ অফিসার হিসেবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে গতিশীল, রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও শুল্কায়নে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ‘বিকম’ নামে একটি নতুন সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছেন কাস্টমস হাউসে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই প্রথম বেনাপোল কাস্টমস হাউসই একমাত্র ডিজিটাল কাস্টম হাউসে উন্নীত হলো। এছাড়াও গেট ডিভিশন ও এক্সিট নোট চালু হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ট্রাক জট এড়াতে কাস্টম হাউস আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড়করণে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছে। বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, কাস্টমস আইন-১৯৬৯ এর ধারা ৮২ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী বেনাপোলে বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যচালান অবতরণের পর ৩০ দিনের মধ্যে অথবা কাস্টমসের অনুমোদিত অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে শুল্ক-কর পরিশোধ করে খালাস নিতে হবে। অন্যথায় ওই পণ্য নিলাম বা আইনানুগ উপায়ে নিষ্পত্তি করা হবে।
এ অবস্থায় উল্লিখিত আইন লঙ্ঘনের অপরাধে জরিমানা ও পোর্ট চার্জ পরিহারের লক্ষে বেনাপোল কাস্টম হাউসের আওতাধীন বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা ও অখালাসকৃত সব পণ্যচালান দ্রুত খালাস নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান।
এ বিষয়ে কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, বেনাপোল কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ একটি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে বৈধ আমদানি ও সৎ করদাতাদের সার্বিক সহযোগিতা দিতে বদ্ধ পরিকর। বিদ্যমান আইন ও বিধি মোতাবেক যথাযথ পরিমাণ রাজস্ব আদায় ও দ্রুত পণ্যচালান খালাসে সবার সহযোগিতা চাই। এই করোনাকালেও আমাদের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সরকারের রাজস্ব আদায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সারাবাংলা/এনএস